খানিকটা হয়তো ইতিহাসের পুনরাগমন। ইউপিএ -১-এর মনমোহন সিং সরকার পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে ভারতরত্ন সম্মান দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল। পার্টির জোরালো আপত্তিতে জ্যোতি বাবু সেই সম্মান প্রত্যাখ্যান করেন। একই পথে হেঁটে পদ্মভূষণ প্রত্যাখ্যান করলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দু’টি ঘটনায় মিল খুঁজতে যাওয়ার আগে ইতিহাস ঘেটে দেখা প্রয়োজন।
জল্পনা ছিল নড়বড়ে ইউপিএ সরকারকে ইস্যু ভিত্তিক সমর্থন দেওয়া বামেদের হয়ে এই সম্মানের জন্য তদ্বির করেছিলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। সিপিআইএমে সোমনাথ, সুভাষ চক্রবর্তীদের মতো অনেকেই জ্যোতি বাবুকে ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ ভাবতে পছন্দ করতেন। তাই প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার ‘দুধের স্বাদ’ ভারতরত্নের ‘ঘোলে’ মেটাতেই এই উদ্যোগ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারনা। কিন্তু প্রকাশ কারাট বা অনিল বিশ্বাসরা জোরালো আপত্তি করেন। বামেদের সমর্থনে চলা ইউপিএ সরকার থেকে কোনো বাড়তি সুবিধা নিতে না চাওয়া বাম নেতৃত্বের আপত্তিতে ভারত রত্ন না হলেও জ্যোতি বসু প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার মতো এই নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো ‘ঐতিহাসিক ভুল’ জাতীয় মন্তব্য করেন নি।
জ্যোতি বসুকে ভারত রত্ন দেওয়ার প্রস্তাবের সময় শুধু পশ্চিমবঙ্গ থেকেই বামেদের ৩৫ জন সাংসদ ছিলেন। আজ সংখ্যা শূণ্য। তারপরেও কেন মোদি সরকার বুদ্ধদেবকে এই সম্মান দিতে চাইল। শারীরিক দিক থেকে অশক্ত বুদ্ধদেব বিগত তিন বছরে হাসপাতাল ছাড়া বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোথাও যান নি। এমনকি ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে ভোটাধিকারও প্রয়োগ করেন নি। তাই তিনি যে সশরীরে রাইসিনা হিলের বিশাল প্রাসাদের দরবার হলেও যাবেন না তা মোদি সরকার জেনেও এই ঘোষণা করাতে এতে ‘ঘোলা জলে মাছ ধরার’ উদ্দেশ্য রয়েছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
আর রাজনৈতিক অবস্থান থেকে বিজেপির সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে থাকা বাম নেতা এই সম্মান প্রত্যাখ্যান করবেন তা তো স্বাভাবিক ঘটনা। রাষ্ট্রপতি ভবন ছাড়ার পর প্রনব মুখোপাধ্যায় মোদি সরকারের দেওয়া ভারত রত্ন গ্রহন করলেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যে করবেন না তা হয়তো যারা পদ্ম তালিকা প্রস্তুত করেছেন তারাও জানতেন। সব মিলিয়ে জল ঘুলিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা। তাই পদ্মভূষণ তালিকায় সব থেকে প্রথম নাম গুলাম নবি আজাদের। কাশ্মীরের এই কংগ্রেস নেতা যে দলে খানিকটা বিদ্রোহী তা আল গোপন নেই। তাই এখানেও রাজনীতির অন্য গণিতের সন্ধান পাচ্ছে তথ্যাভিজ্ঞ মহল। সব মিলিয়ে পদ্ম সম্মান যে শাসকের অনুগ্রহের কলঙ্কের কালিমায় লিপ্ত হলো আরও একবার তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।