Sambad Samakal

Satyajit Ray: সত্যজিতের জন্মবার্ষিকীতেই ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’ নিয়ে অ্যাডভেঞ্চার জার্নি শুরু সৃজিতের

May 2, 2022 @ 10:51 pm
Satyajit Ray: সত্যজিতের জন্মবার্ষিকীতেই ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’ নিয়ে অ্যাডভেঞ্চার জার্নি শুরু সৃজিতের

সোমনাথ লাহা

শতবর্ষ অতিক্রম করেও অপরাজেয় সত্যজিৎ রায়। মহান এই স্রস্টার ১০১তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর অমর সৃষ্টি গোয়েন্দা প্রদোষ চন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদাকে হ‌ইচ‌ই প্ল্যাটফর্মে হাজির করলেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই পাঁচে পা দেওয়া এসভিএফের এই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে তাদের আগামী আসন্ন ওয়েব সিরিজের মধ্যে অন্যতম চমক ছিল ২১নম্বর রজনী সেন রোডের মগজাস্ত্র ধারী, কোল্ট ৩২ রিভলবার ব্যবহারকারী গোয়েন্দা। সবাই যাঁকে একডাকে ফেলুদা নামে চেনে। সিরিজের নাম ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’। এক অর্থে যেটি সত্যজিতের লেখা প্রথম ফেলুকাহিনির নাম‌ও। এভাবেই তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে হ‌ইচ‌ই প্ল্যাটফর্মে ফেলুদার অ্যাডভেঞ্চার জার্নি শুরু করলেন সৃজিত। এই সিরিজের সিজন ওয়ান, যেটির স্ট্রিমিং শুরু হবে জুন মাস থেকে, সেখানে দেখা যাবে সত্যজিৎ রায়ের অন্যতম জনপ্রিয় ফেলুকাহিনি ‘দার্জিলিং জমজমাট’। সিরিজে ফেলুদার ভূমিকায় রয়েছেন টোটা রায়চৌধুরী। তোপসের চরিত্রে কল্পন মিত্র ও লালমোহন গাঙ্গুলী ওরফে জটায়ুর চরিত্রে রয়েছেন অনির্বাণ চক্রবর্তী। প্রসঙ্গত ইতিপূর্বে অন্য আরেকটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে এই অভিনেতাদের নিয়ে ‘ছিন্নমস্তার অভিশাপ’ নামক ফেলুকাহিনিটির নির্দেশনা দিয়েছিলেন সৃজিত। এবার হ‌ইচ‌ই-তে প্রথমবার হাজির হচ্ছেন ফেলুদা, তোপসে, লালমোহন… এই থ্রি মাস্কেটিয়ার্স। সোমবার বাইপাস সংলগ্ন একটি পাঁচতারা হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে এল ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’-র সিজন ওয়ানের ‘দার্জিলিং জমজমাট’-এর অ্যানাউন্সমেন্ট ভিডিও। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় সহ টোটা রায়চৌধুরী, অনির্বাণ চক্রবর্তী ও কল্পন মিত্র এবং এই সিরিজের সংগীত পরিচালক জয় সরকার। ১৯৮৬-তে প্রকাশিত এই ফেলুদা কাহিনির প্রেক্ষাপট দার্জিলিং। রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাসিক লালমোহন গাঙ্গুলীর উপন্যাস থেকে আবার ছবি করার সিদ্ধান্ত নেন পুলক ঘোষাল। সেই ছবির শুটিং হবে দার্জিলিংয়ে। সেজন্য দার্জিলিংয়ে র‌ওনা দেন ফেলুদা, তোপসে ও জটায়ু। ঘটনাচক্রে সেখানে শুটিং চলাকালীন‌ই ঘটে যায় একটি খুন। রহস্যে জড়িয়ে পড়েন ফেলুদা। কীভাবে তিনি তাঁর মগজাস্ত্রের সাহায্য নিয়ে সেই সমস্যার সমাধান করেন, তাই নিয়েই এই গল্প।এদিন হ‌ইচ‌ইয়ের অ্যানাউন্সমেন্ট ভিডিওতে চমৎকার ভাবে সেই আভাস দেওয়া হয়েছে। এক‌ইসঙ্গে ছুঁয়ে যাওয়া হয়েছে ফেলুদা কাহিনির সঙ্গে জড়িত শহরের কিছু আইকনিক স্থান। তার মধ্যে যেমন রয়েছে গড়পাড়ের এথেনিয়াম ইনস্টিটিউশন, তেমন‌ই পার্কস্ট্রিটের গোরস্থান, হগমার্কেটে ফেলুদার পছন্দের ডালমুটের দোকান সহ রয়্যালের মটন বিরিয়ানি ও চাপ খাওয়া। সব শেষে লালমোহন গাঙ্গুলীর এয়ারটিকিট বার করতেই ফেলুদা বলেন ‘যেখান থেকে সবকিছুর শুরু আবার সেখানেই…’। হ‌ইচ‌ই-তে ফেলুদাকে নিয়ে এই নতুন জার্নি প্রসঙ্গে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় জানান, “ফেলুদা আমার স্বপ্নের চরিত্র। সেই স্বপ্নপূরণ আমি করতে পেরেছি টোটা রায়চৌধুরীকে পেয়েছি বলে। ওঁর হাঁটাচলা, কথা বলা, তাকানো, সেন্স অফ হিউমার, সবকিছুর পরিমাপটা এত ভালো, পাশাপাশি সত্যজিৎ রায়ের লেখা স্কেচ, বর্ণনা, সিকোয়েন্স সবকিছুতেই অসম্ভব মিল রয়েছে। টিকালো নাক, চোয়াল, ফিজিক্যাল ফিটনেস, বাঙালিয়ানা সবটাই… ও একেবারে যেন ব‌ইয়ের পাতা থেকে উঠে এসেছে। টোটার জন্ম‌ই হয়েছে ফেলুদা লগ্নে। আমায় বিশেষ কিছুই বলতে হয়নি। যেটা চেয়েছি আপনিই হয়ে গিয়েছে। কারণ, ওর মধ্যেই একটা ফেলুদা সুলভ বিষয় রয়েছে। একদম টানটান শিরদাঁড়া নিয়ে আপস‌হীনভাবে বাঁচা বাঙালি। শুধু ও ফিজক্যালি ফিট বলে সিগারেট খেত না… এখন সেই ষোলোকলাটুকুও রপ্ত করে ফেলেছে।” পাশাপাশি সৃজিত আর‌ও বলেন, “জটায়ু চরিত্র অনির্বাণের কাছে শক্ত চ্যালেঞ্জ হলেও ও নাট্যজগতের মানুষ হ‌ওয়ায় খুব সুন্দরভাবে চরিত্রটাকে ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি সূক্ষ্ম কাজগুলো সুন্দর করে করেছে। ডাবিংয়েও খুব ভালো ক্ল্যারিটি নিয়ে এসেছে।” ফেলুদার শুটিং করার সময়‌ই তিনি যে সবচেয়ে আনন্দে থাকেন এবং কোন‌ও চ্যালেঞ্জ‌ই তাঁকে টলাতে পারে না, তা জানাতে ভুললেন না সৃজিত। পাশাপাশি আটের দশকের দার্জিলিংয়ের প্রেক্ষাপট নির্মাণ বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল তাও জানাতে ভুললেন না। টোটার কথায়, “দু’দশকের উপর অভিনয় করছি। এই একটা চরিত্রে কাজ করার জন্য‌ই আমি লোভী ছিলাম। সেটা ফেলুদা চরিত্র। আমার সৌভাগ্য আমি সেটা করার সুযোগ পেয়েছি। যত্ন সহকারে করেছি। সৃজিতকে ধন্যবাদ আমাকে জীবনের শ্রেষ্ঠ চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ দেওয়ার জন্য। ২০০৭-এ মুক্তিপ্রাপ্ত ‘টিনটোরেটোর যীশু’, যাতে আমি একটা ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম, সেটা দেখার পর সেই সময় সৃজিত আমাকে বলেছিল যদি আমি কখনও ফেলুদা বানাই তোমাকে নিয়েই বানাবো। ১২ বছর পর সৃজিত সেই প্রমিসটা রাখবে সেটা ভাবিনি। এই চরিত্রটা করার জন্য শুটিং চলাকালীন ফিল্টার ছাড়া ২২ থেকে ২৫টা সিগারেট খেয়েছি। তবে শুটিং শেষ হ‌ওয়ার পর বন্ধ করে দিয়েছি। ফেলুদা যেমন সংযমী খাদ্যরসিক, আমিও তাই। একমাত্র সিগারেট ছাড়া ফেলুদা যা খেতে ভালোবাসেন আমিও সেই খাবারগুলো খেতে ভালোবাসি। আমার ছোটবেলা থেকেই শয়ন, স্বপনে জাঁকিয়ে বসা একটা চরিত্র ফেলুদা। ফেলুদার মধ্যে একজন আদর্শ মানুষের গুণ রয়েছে। যত বড় হচ্ছি বুঝতে পারছি এই চরিত্রটা কোথাও গিয়ে যেন আমাকেও পরোক্ষভাবে ওইরকম এক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।” অনির্বাণের মতে, “ফেলুদার সঙ্গে যুক্ত হ‌ওয়াটাই একটা আবেগের বিষয়। খুব কম কাজ‌ই আসে যেখানে ভালবেসে কাজ করি, একটা গর্ব অনুভব করি কাজ করার পরে। এটা সেইরকমই একটা চরিত্র। সৃজিতকে ধন্যবাদ এরকম একটা আইকনিক চরিত্রে আমাকে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য, যেটা সাহিত্যর পাশাপাশি ফিল্মেও সমান জনপ্রিয়। আমি একজন অভিনেতা হিসেবে চেষ্টা করেছি যাতে চরিত্রটার প্রতি সুবিচার করতে পারি। পাশাপাশি আমার লক্ষ্য ছিল যাতে একেনবাবু আর জটায়ুকে আলাদা করে ফুটিয়ে তুলতে পারি। চরিত্রটা বুঝে নেওয়ার পর আর অসুবিধা হয়নি। এই গল্পে জটায়ুকে পুলক ঘোষালের ছবিতে অভিনয় করতেও দেখা যাবে। গল্পে যা রয়েছে সেটাকেই আমরা ফুটিয়ে তুলেছি। আশা করি সকলের ভালো লাগবে। এত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি এই চরিত্রে অভিনয় করে তাই দায়িত্বটাও বেড়ে গিয়েছে।” কল্পনের কথায়, “যতবার ফেলুদার শুটিং করতে যাই, ততবার মনে হয় শুটিং নয়… অ্যাডভেঞ্চারে যাচ্ছি। এই কথাটাই শুধু মনে হয়। সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। বাকিটা দর্শকরা বলবেন।” সিরিজের সংগীত পরিচালক জয় সরকার জানান, “সৃজিত ও ‌হ‌ইচ‌ইয়ের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ এইরকম একটা কাজের সঙ্গে আমাকে যুক্ত করার জন্য। নিজের সেরাটা দিয়ে আনন্দের সঙ্গে কাজ করেছি।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *