আজ রাতে প্যারিসে অনুষ্ঠেয় রিয়াল মাদ্রিদ আর লিভারপুলের মধ্যকার চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ফল নিয়ে ফুটবল অনুরাগীদের মধ্যে চুড়ান্ত উত্তেজনা বিরাজ করছে। দুই কোচ সম্ভাব্য কোন কৌশলে দলকে মাঠে নামাবেন, সেটার মধ্যেই নিহিত থাকবে প্রশ্নগুলোর উত্তর। কেমন হবে পারে দুই দলের সম্ভাব্য কৌশল?
কাগজে-কলমে দুই দলই ৪-৩-৩ ছকে নামবে। রিয়াল মাদ্রিদ আর লিভারপুলের মিল বলতে এটুকুই। রিয়াল মাদ্রিদ ৪-৩-৩ ছকে খেললেও, রাইট উইঙ্গার হিসেবে প্রথাগত কোনো উইঙ্গার না খেলে ফেদেরিকো ভালভার্দের মতো কোনো মিডফিল্ডার খেললে, ভালভার্দের কাজ হবে সুযোগ বুঝে নিচে নেমে রাইটব্যাক দানি কারভাহালকে রক্ষণভাগে সাহায্য করা। সে ক্ষেত্রে ৪-৩-৩ ছকটা বদলে ৪-৪-২ হয়ে যায়।
বল পায়ে না থাকলে ৪-৪-২ ছকটা বেশ কার্যকরী রিয়াল মাদ্রিদের জন্য। প্রতিপক্ষের পায়ে বল থাকলে রিয়াল সাধারণত ৪-৪-২ বা ৪-৫-১ ছকেই প্রেস করে। করিম বেনজেমার সঙ্গে প্রেস করার জন্য ওপরে উঠে যান লুকা মদরিচ। করিম বেনজেমার ওপর দায়িত্ব থাকে প্রতিপক্ষের সেন্টারব্যাকদের প্রেস করার, ওদিকে মদরিচ প্রেস করেন প্রতিপক্ষের একজন রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডারকে। প্রেস করার মাধ্যমে বল জোগাড় করতে পারলেই ব্যস!
ততক্ষণে প্রতিপক্ষের রাইটব্যাককে পরাস্ত করে ওপরে উঠে যাওয়া লেফট উইঙ্গার ভিনিসিয়ুসের পথে বল বাড়িয়ে দেন বেনজেমা, সৃষ্টি হয় গোলের সুযোগ। খেলার শুরু থেকেই এই কৌশল বাস্তবায়ন করতে চায় রিয়াল মাদ্রিদ, যে কারণে রিয়ালের ম্যাচের শুরুর কয়েকটা মিনিট দর্শকেরা নিশ্বাস ফেলতে পারেন না যেন। এতই দ্রুতগতির সঙ্গে হয় সবকিছু! চেলসির বিপক্ষে প্রথম লেগে প্রথম ২৪ মিনিটের মধ্যেই রিয়ালের দুই গোল, দ্বিতীয় লেগে ১৫ মিনিটের মধ্যে মাউন্টের গোল, ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ৩৩ মিনিটের মধ্যেই দুই দলের তিন গোল—এই কথারই প্রমাণ দেয়।
কিন্তু প্রতিপক্ষের মিডফিল্ডাররা মাঝমাঠের দখল নিয়ে নিলে বেনজেমা-মদরিচরা অত ভালোভাবে প্রেস করতে পারেন না। তখনই রিয়ালের ছকটা ৪-৩-৩ থেকে বদলে ৪-৫-১ বা ৪-৪-২ হয়ে যায়। লিভারপুলের অবশ্য প্রেস নিয়ে অমন কোনো সমস্যা নেই। বল পায়ে থাকুক বা না থাকুক, দুই ক্ষেত্রেই লিভারপুলের প্রেস করার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে।
তাই বলে রিয়াল মাদ্রিদ কি পিছিয়ে আছে? অবশ্যই নয়। প্রেস নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের সামান্যতম চিন্তা থেকে থাকলে সেটা মিটিয়ে দেয় দলটার খেলোয়াড়দের মান। আক্রমণভাগে করিম বেনজেমা, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, মাঝমাঠে লুকা মদরিচ আর টনি ক্রুস বল পায়ে এতটাই দক্ষ, যে মুহূর্তের মধ্যেই প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের প্রেস ভেঙে বল নিয়ে বেরিয়ে যেতে পারেন, উঠে যেতে পারেন আক্রমণভাগে। লিভারপুলের মাঝমাঠে এক থিয়াগো আলকানতারা ছাড়া বল পায়ে জর্ডান হেন্ডারসন আর ফাবিনিও অতটা দক্ষ নন। নিজেরা গোলের সুযোগ সৃষ্টি করার চেয়ে থিয়াগো আলকানতারা বা ট্রেন্ট অ্যালেক্সান্ডার-আরনল্ডরা যাতে আক্রমণ গড়ে তুলতে পারেন, সেদিকেই লক্ষ থাকে তাঁদের। আজও যার ব্যতিক্রম হবে না। শেষ হাসি কোন দল হাসবে এখন সেটাই দেখার!