গতরাতে আচমকাই সকলকে ‘আলবিদা’ জানিয়ে চলে গিয়েছেন গায়ক কে কে। তাঁর মৃত্যুর পরেই ১৬ বছর ধরে মনে ভেতরে পুষে রাখা অভিব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন কবি শ্রীজাত। কে কে’র গান তিনি সহ্য করতে পারতেন না,এমনটাই লিখেছেন শ্রীজাত। কিন্তু কেন? শ্রীজাত লিখছেন,”গত ১৬ বছর ধরে কে কে’র গান আমার অসহায় লাগে। ক্যাব-এর রেডিও-তে হঠাৎ বেজে উঠলে চালককে তৎক্ষণাৎ বলি চ্যানেল সরিয়ে দিতে, কোনও জমায়েতে হুট করে বেজে উঠলে সন্তর্পণে উঠে বাইরে চলে যাই। আসলে তাঁর কাছ থেকে নয়, পালিয়েছি আমার অকালপ্রয়াত ভাইয়ের কাছ থেকে।”
নিজের প্রয়াত ভাইয়ের কথা লিখতে গিয়ে শ্রীজাত লিখছেন, “ছোট ভাই, যার আদরের নাম পুশকিন, তার প্রিয় গায়ক ছিলেন কে কে। গিটারে তার হাত চলাফেরা করত চমৎকার, আর সুরে গলাও খেলত দিব্যি। ‘ইয়ারোঁ, দোস্তি বড়ি হি হসীন হ্যায়’, আর ‘হম রহেঁ ইয়া না রহেঁ কল’। আমাদের দু’কামরার ছোট্ট বিছানায়, আলসে মশারির ছোঁয়া লাগা সকালবেলায়, গিটারে সাবলীল আঙুল বুলিয়ে বছর একুশের পুশকিন চোখ বন্ধ করে গেয়ে উঠত এই দুই গান। আমাকে এটুকুও বুঝতে না-দিয়ে যে, আর দু’বছরের মধ্যে ভয়াবহ বাইক দুর্ঘটনায় সে চলে যাবে ন’দিনের দীর্ঘ ঘুমে। সেই থেকে কে কে আমার শত্রু, সেই থেকে এই গানগুলো আমার দু’চোখের বিষ। সেই থেকে আমি কে কে’র অসামান্য সুরেলা আর টানটান দরাজ কণ্ঠ থেকে পালিয়ে বেড়াই।”
প্রয়াত কে কে’র স্মরণে শ্রীজাত লিখেছেন, “আজ তিনি চলে গেলেন, যাবার মুহূর্তের কিছু আগেও গানই তাঁর সঙ্গ দিলো। কী গেয়েছিলেন, জানি না। রাগ ছিল লোকটার উপর খুব। কখনও দেখা হলে কেঁদেকেটে ঝগড়া করার ছিল অনেকখানি। জড়িয়ে ধরবারও লোভ ছিল খুব, অভিমানে, অসহায়তায়। সেসব গানের সঙ্গেই ভেসে গেল। ১৬ বছরের গভীর ক্ষতের উপর মলমের বদলে মশাল চেপে ধরলেন তিনি। এমনই মশাল, যার আগুনে দূরে কোথাও পুশকিনের গিটারটাও পুড়ে যাচ্ছে, একা একা…”