Sambad Samakal

Tollywood: প্রকাশ্যে ‘ভটভটি’-র ট্রেলার

Jul 16, 2022 @ 12:33 am
Tollywood: প্রকাশ্যে ‘ভটভটি’-র ট্রেলার

সোমনাথ লাহা

স্বপ্ন আর বাস্তবের মিশেলে এক মায়া রূপকথার গাথা। এই গাথার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে জল, আগুন, বায়ু ও মাটির মতো উপাদান। আর রয়েছে চিরন্তন চলে আসা রাজনীতি। একদল মানুষ মেতেছে পৃথিবী ধ্বংসের খেলায় আর একদল চায় এই ধরিত্রীকে বাঁচাতে। চারপাশে এই মৃত্যুমিছিল, হাহাকারের মাঝে প্রেমের কথা বলে চিরন্তন প্রেমের গল্পের নায়ক ভটভটি। জাহাজবস্তির বাসিন্দা এই ছেলেটির নাম কালের অন্তরালে হারিয়ে গিয়েছে। জাহাজের সঙ্গে বস্তির সম্পর্ক না থাকলেও, বস্তির এহেন নামের মানে খোঁজা ভটভটি মনে করে একসময় জাহাজে চড়ে মানুষ এখানে এসেছিল। গঙ্গাপারের বস্তি নিয়ে এই তথ্য একমাত্র তার কাছেই রয়েছে। বস্তির অন্যান্য ছেলেদের মতো গঙ্গা থেকে পয়সা কুড়োয় সে। পেশায় সে শ্মশানে হরিশচন্দ্র ডোমের সহকারী। তবে ভটভটি স্বপ্ন দেখে। তার বিশ্বাস গঙ্গার ঘোলাটে জলের তলায় রয়েছে ঝিকিমিকি আলোর বিশাল রাজপ্রাসাদ। আর সেখানে মে মানুষগুলো থাকে তারা অর্ধেকটা মাছ আর অর্ধেকটা মানুষ। কার্টুনে দেখা জলপরি রাজকন্যার মতো এক মৎসকন্যার চেয়েও সুন্দরী একদিন হঠাৎ জল থেকে উঠে আসে ভটভটির জন্য। শুরু হয় এক মায়া রূপকথার গাথা। বস্তির মানুষদের চরম অবিশ্বাস ও উচ্ছেদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে মৎসকন্যার সঙ্গে ভটভটির প্রেম। এক অর্থে যা আগুন আর জলের প্রেমকাহিনি। তারপর? সেই উত্তর বড়পর্দার জন্য‌ই না হয় তোলা থাক। এমন‌ই এক অনন্য বিষয়ভাবনা নিয়েই অভিনেতা-পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘ভটভটি’। প্রমোদ ফিল্মস ও ওয়াইজম্যান মুভিজের ব্যানারে নির্মিত এই ছবির প্রযোজকদ্বয় হলেন প্রতীক চক্রবর্তী ও সৌম্য সরকার। রূপকথা ও বাস্তবের মিশেলে গড়া ৪২দিন ধরে শুটিং হয়েছে ৮৫টি আলাদা লোকেশনে। শুধু তাই নয় জল আর আগুনের পরিণতির ভরকেন্দ্রে দাঁড়িয়ে থাকা এই প্রেমকাহিনির জলের তলার অংশের শুটিংয়ের ছবির প্রযোজনা সংস্থা কাজ করেছে ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’ ও ‘মালাং’ ছবির আন্ডার ওয়াটার সিকোয়েন্সে কাজ করা টিমের সঙ্গে। প্রসঙ্গত এটিই তথাগত বড়পর্দায় মুক্তিপ্রাপ্ত হতে চলা প্রথম ছবি। ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঋষভ বসু ও বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়। ছবিতে ভটভটির চরিত্রে রয়েছেন ঋষভ এবং মৎসকন্যার চরিত্রে দেখা যাবে বিবৃতিকে। বড়পর্দায় কাজ করার পাশাপাশি ওয়েব আঙিনায় যথেষ্ট পরিচিত মুখ ঋষভ। অপরদিকে মডেলিং দুনিয়ার পরিচিত মুখ বিবৃতিকেও দর্শকরা দেখেছেন বড়পর্দার পাশাপাশি ওটিটিতে। শুক্রবার বাইপাস সংলগ্ন এক রেস্তোরাঁয় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে এলো এই ছবির ট্রেলার। উপস্থিত ছিলেন ছবির পরিচালক সহ অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলাকুশলীরা। ছবিতে হরিশচন্দ্র ডোমের চরিত্রে রয়েছেন রজতাভ দত্ত। ছবিতে পাখি নামে এক যৌনকর্মী, যিনি একাধারে ভটভটির খুব কাছের মানুষ সেই চরিত্রে রয়েছেন দেবলীনা দত্ত। এছাড়াও ছবিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন দীপঙ্কর দে ও মমতাশঙ্কর। পরিচালনা ছাড়াও ছবিতে একজন পুলিশ অফিসারের চরিত্রে রয়েছেন তথাগত মুখোপাধ্যায় স্বয়ং। ছবিতে অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন প্রয়াত মনু মুখোপাধ্যায় (এটিই তাঁর অভিনীত শেষ ছবি), তমাল রায়চৌধুরী, জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, নিমাই ঘোষ, লামা হালদার, দেবপ্রসাদ হালদার, অনির্বাণ চক্রবর্তী এবং অন্যান্য শিল্পীরা। ছবির কাহিনি লিখেছেন পরিচালক স্বয়ং। চিত্রনাট্য লিখেছেন অভিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ঋকসুন্দর বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্রাবিত পাল ও পরিচালক নিজে। সিনেমাটোগ্রাফার প্রতীপ মুখোপাধ্যায়। সংগীত পরিচালনায় ময়ূখ ভৌমিক। ইতিমধ্যেই বিয়াস সরকারের গাওয়া ‘জলপরীর গান’ বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এছাড়াও ছবিতে একটি র‌্যাপ গান ‘চাই টা কি’ গেয়েছেন ছবির মুখ্য অভিনেতা ঋষভ নিজে। সম্পাদনায় আমির মন্ডল। ‘ভটভটি’ ছবির ৩মিনিট ২৬সেকেন্ডের ট্রেলার এক অর্থে ভিস্যুয়াল ট্রিট দর্শকদের জন্য।১১আগষ্ট মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবি নিয়ে এদিন অকপটে মনের কথা বললেন ছবির পরিচালক সহ অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ” এটা একটা পলিটিক্যাল ছবি। ছবির ট্রেলারেই একটা পলিটিক্যাল বার্তা দিয়েছি। ছবি মুক্তির পর বোঝা যাবে আমি কী বার্তা দিয়েছি। ‘ভটভটি’ লেখার সময় থেকেই একটা বিষয় আমার মাথায় ছিল যে, এই ছবিতে এমন বিষয় তুলে ধরবো যা সবদেশেই সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। এমন কোন‌ও দেশ নেই যেখানে রূপকথা নেই, তেমনই এই ছবিতে এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো সব দেশেই রয়েছে। তাই নিয়ে প্রচুর সিনেমা তৈরি হয়। আমি আমার মতো করে এই ছবিতে বিষয়টা তুলে ধরেছি।” ছবিতে নিজের অভিনয় প্রসঙ্গে তথাগতর জবাব, ” প্রযোজকের চাপে পড়েই এই চরিত্রে আমাকে অভিনয় করতে হয়েছে। এই গল্পের একমাত্র কালো চরিত্র এটি।” ঋষভের অভিমত, “এটা জলপরীর সঙ্গে বস্তির ছেলের প্রেমের ছবি হলেও আদতে রাজনৈতিক ছবি। তবে রাজনীতিটা দল কিংবা রঙের নয়। একশ্রেণীর মানুষের আরেকশ্রেণীর মানুষের প্রতি রাজনীতি। এক কথায় রাজনীতির নামে নিয়ে দুভাগে বিভক্ত হ‌ওয়া মানুষের। সেটা হিন্দু-মুসলমানের পরস্পরের রাজনীতি, সাদা চামড়া-কালো চামড়ার রাজনীতি, হাইরাইজে থাকা মানুষের বস্তির বিরুদ্ধে রাজনীতি। এই চলতে থাকা রাজনীতির চাপান‌উতোরের মাঝে স্বপ্ন নিয়ে বাঁচার কথা বলে ভটভটি। মৎসকন্যার সঙ্গে সে প্রেম করে।” পাশাপাশি এই ছবির হাত ধরে তাঁর স্বপ্নপূরণ হয়েছে সেকথাও জানাতে ভোলেননি অভিনেতা। ছবি নিয়ে প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে ঋষভের উত্তর, “প্রত্যাশা করলে যদি তা পূরণ না হয়, তাহলে দুঃখ পাব। তবে আমি এটা বিশ্বাস করি আজ থেকে পাঁচ-দশ বছর তো বটেই এমনকি পঞ্চাশ বছর পরেও এই ছবিটা নিয়ে কথা হবে। এই ছবিটা থেকে যাবে।” বিবৃতির মন্তব্য, “এটা একটা বিশ্বাসের গল্প, স্বপ্নের গল্প।এই ছবির মধ্যে একটা বাঙালিয়ানা রয়েছে। ছোট থেকে বড় সকলেই কোন‌ও না কোন‌ও চরিত্রের সঙ্গে নিজেদের মিল খুঁজে পাবেন। ট্রেলার লঞ্চের পর‌ই আমার মনে হচ্ছে একটা স্বপ্নপূরণ হয়েছে। চোখে জল অবধি চলে এসেছে। ভীষণ উত্তেজিত আমি এই ছবি নিয়ে। আমার বিশ্বাস এই ছবি সকলের ভালো লাগবে।” দেবলীনার মতে, “এটা সবার জন্য বানানো ছবি। এই ছবিতে যেমন কমার্শিয়াল বিষয়বস্তু রয়েছে, তেমনই এন্টারটেনমেন্ট‌ও রয়েছে। পাশাপাশি ছবিটা অন্যরকম‌ও। কারণ ছবিতে পলিটিক্যাল আন্ডারকারেন্ট রয়েছে। এই ছবিতে আমি পাখি নামের একজন যৌনকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করছি, যে জাহাজবস্তির বাসিন্দা। সে ভটভটির একাধারে ফ্রেন্ড, ফিলোজফার,গাইড।”ছবিতে নাচের প্রসঙ্গে দেবলীনা জানান, “ছবিতে উদ্যাম ভাসান নৃত্য করেছি। মনুদা(মনু মুখোপাধ্যায়) ও তমালদাও নেচেছেন। আজ মনুদাকে খুব মিস করছি।” ছবি নিয়ে দেবলীনা প্রত্যাশার কথা জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, “আমার প্রত্যাশা অনেকখানি। ‘ভটভটি’ আমাদের প্রথম সন্তান। তিন বছর সময় লেগে গেল ছবিটা মুক্তি পেতে। তাই প্রত্যাশা আর উত্তেজনা দুটোই চরম পর্যায়ে রয়েছে। আমি ভীষণ আশাবাদী এই ছবি নিয়ে।” অনির্বাণ চক্রবর্তীর কথায়, ” এই ছবিতে আমি একজন খুনি ‘বাঘা’-র চরিত্রে অভিনয় করছি। সে সিরিয়াল কিলার বা সাইকোপ্যাথ নয়। সারা ছবিতে আমার কোন‌ও সংলাপ নেই। তবে এই চরিত্রটির খুন করার পিছনে কারণ রয়েছে। সেটা জানতে গেলে ছবিটা দেখতে হবে।”

Related Articles