চলে গেলেন ফুটবলের প্রথম সন্তান। অনেকদিন ধরেই ভুগছিলেন ক্যান্সারে। চিকিৎসকরা জবাব দিয়ে দিয়েছিলেন। তবু চেষ্টা জারি ছিল। শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদ সব চেষ্টা ব্যর্থ করে জীবনযুদ্ধে হার মানলেন ফুটবল সম্রাট পেলে। তাঁকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ গোটা বিশ্ব। একই সঙ্গে শেষ হয়ে গেল মারাদোনা-পেলের লড়াই। হল যুগের অবসান।
পেলেই একমাত্র ফুটবলার যাঁর তিনটে বিশ্বকাপ জয়ের নজির রয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড, ইন্টার মিলান-সহ একাধিক ক্লাব টাকার থলি নিয়ে পেলেকে সই করানোর জন্য বসেছিল। কিন্তু ব্রাজিল ছেড়ে অন্য কোথাও খেলতে যাননি পেলে। অর্থকে বরাবরই দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন তিনি। দীর্ঘ ১৮ বছর স্যান্টোসে খেলেছিলেন। ৪৯৩ ম্যাচে করেছিলেন ৫০১টি গোল। এরপর সই করেন আমেরিকার নিউ ইয়র্ক কসমসের হয়ে।
সেই কসমসের হয়েই প্রথম বার কলকাতায় আসা পেলের। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে শহরে পা দিয়েছিলেন বিশ্ব ফুটবলের রাজপুত্র। কিন্তু সেই খেলা নিয়েও দেখা গিয়েছিল সমস্যা। ম্যাচের দিন এবং আগের দিন প্রবল বৃষ্টিতে ভেসেছিল শহর। ইডেন গার্ডেন্সের মাঠে বিভিন্ন জায়গায় জমে গিয়েছিল জল। পেলের বাঁ পায়ের বিমা করানো ছিল। বিমা কোম্পানির আধিকারিকরা কিছুতেই পেলেকে ওই মাঠে খেলতে দিতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু কলকাতার লাখো লাখো সমর্থকের কথা ভেবে পেলে খেলার সিদ্ধান্ত নেন। সেই ম্যাচ ২-২ ড্র হয়েছিল। কিন্তু কাদাজল ভরা মাঠেও পেলের পায়ে যে জাদু দেখা গিয়েছিল, তা এখনও ভুলতে পারেননি ওই ম্যাচের দর্শকেরা। পেলের একটি দুরন্ত ফ্রিকিক এখনও তাঁদের চোখে ভাসে।
কথিত আছে, ব্রাজিলের ছেলেরা নাকি জন্মের পরেই প্রথম উপহার হিসেবে পায় একটি ফুটবল। অনেকের সারা জীবন সেই গোলাকার চামড়ার বস্তুটিকে নিয়েই কেটে যায়। অনেকে আবার বড় হওয়ার পর আগ্রহ খুঁজে পায় অন্য কিছুতে। পেলের জীবনও তার ব্যতিক্রম ছিল না। ব্রাজিলের মিনাস জেরাইসে জন্ম হয়েছিল তাঁর। বাবা ছিলেন ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লুমিনেন্সের ফুটবলার ডোনডিনহো। ইলেকট্রিক বাল্বের আবিষ্কর্তা টমাস এডিসনের নামানুসারে ছেলের নাম রাখেন। তবে ‘এডিসন’ বদলে নাম দেন ‘এডসন’। এডসন আরান্তেস দি নাসিমেন্তো। ডাকনাম দেওয়া হয় ‘ডিকো’।
১৯৭০ বিশ্বকাপ ছিল পেলের জীবনে শেষ এবং অন্যতম সেরা বিশ্বকাপ। ফাইনালে ইটালিকে ৪-১ ব্যবধানে উড়িয়ে দেয় ব্রাজিল। কার্লোস আলবার্তোকে দেওয়া পেলের সেই পাস এখনও ফুটবলপ্রেমীদের চোখে লেগে রয়েছে।