দিন কয়েক আগেই পুর বাজেটে প্রবল অর্থ সঙ্কটের কথা জানিয়েছিলেন কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ফলে অনেক সময়েই কর্মীদের বেতন বা অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনের অর্থে টান পড়ছে। আর তারমধ্যেই এক পুর আধিকারিকের চা-জলযোগের মাসিক খরচ ৩৫ হাজার টাকা! এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।
কলকাতা পুরসভার মুখ্য আইন আধিকারিক মহম্মদ সেলিম আনসারি। রাজ্য সরকারি একাধিক দফতরে আইন আধিকারিকের দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি। জানা যাচ্ছে, ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত তাঁর ‘আতিথেয়তা ভাতা’ বাবদ মাসিক বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সেই ভাতার পরিমাণ কয়েকবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার টাকায়! ৮ বছরেরও কম সময়ে ভাতা বেড়েছে প্রায় ৮ গুণ!
আসলে আধিকারিকদের কাছে আসা অতিথিদের চা-জলযোগের জন্য দেওয়া হয় ‘আতিথেয়তা ভাতা’। কলকাতা পুরসভার হিসেব অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, করোনা কালেও ‘আতিথেয়তা ভাতা’ বাবদ বিপুল অর্থ পেয়েছেন এই পুর আধিকারিক। অথচ সেই সময়ে পুরসভায় মানুষের আনাগোনা ছিল হাতেগোনা। ২০২০ সালেই দু’দফায় ভাতার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ হাজার টাকা। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ফের ওই ভাতা বেড়ে হয় ৩৫ হাজার টাকা।
২০১৫-এর জুন থেকে ২০২৩-এর জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৯ দফায় ভাতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর প্রতিবারই পুর কর্তৃপক্ষের কাছে একই মর্মে চিঠি লিখে বলা হয়েছে, “অতিথির আনাগোনার সংখ্যা বাড়ছে। তাই চা, স্ন্যাক্স বরাদ্দের জন্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হোক।” পুর কমিশনারের উদ্দেশে লেখা ৯টি চিঠিই মঞ্জুর করা হয়েছে। পুর কমিশনার বা মেয়রের সাক্ষর রয়েছে ওই চিঠিগুলিতে। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী কাউন্সিলররা প্রশ্ন তুলছেন, যেখানে স্বয়ং মেয়র পুর তহবিলের বেহাল দশার কথা বারবার তুলে ধরছেন, সেখানে এক আধিকারিকের জন্য এই রাজকীয় আয়োজন কেন?
বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ বলেন ”অনেক সময়েই সময়মতো কর্মীরা বেতন ও অবসরপ্রাপ্তর পেনশন পাচ্ছেন না। অথচ এক জন আধিকারিকের চা, স্ন্যাক্সের জন্য এই বিপুল খরচ! পুরো বিষয়টির তদন্ত হোক।” কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠকের দাবি, ”পুরসভার টাকা এভাবে অপচয়ের জন্যই প্রতিবছর ঘাটতি বাজেট তৈরি হচ্ছে।”
যদিও এই বিষয়ে পুর আধিকারিক মহম্মদ সেলিম আনসারির কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। মেয়র পারিষদ বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ”মুখ্য আইন আধিকারিক যথেষ্ট সত্ মানুষ। আতিথেয়তা ভাতা পেতেই পারেন। এই অনৈতিক সমালোচনার কোনও মানে হয় না।”