“আজ আমার মৃত্যুদিন।” শুক্রবার রাতে বিধাননগরে নিজের বাড়ির সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমন মন্তব্যই করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পাশাপাশি বললেন, “সুপ্রিম কোর্ট যুগ যুগ জিও।” তবে লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে তিনি যে পালিয়ে যাওয়ার লোক নন, সেকথাও স্পষ্ট করলেন আরও একবার।
রাতে হাইকোর্ট থেকে বেরিয়ে বিধাননগরে নিজের বাড়িতে ঢোকার মুখে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেখানেই তাঁর গলায় শোনা যায় অভিমানের সুর। তবে তার আগে হাইকোর্ট থেকে বেরোনোর মুখে কিন্তু অন্য মুডে ধরা দিয়েছিলেন তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, পদত্যাগ করছেন না। সাফ জানিয়েছিলেন, “পদত্যাগ করছি না। আমি পালিয়ে যাবার লোক নই।”
শুক্রবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টে তিনটি ‘ধাক্কা’ খেয়েছেন। একটি মামলা বিচারপতির এজলাস থেকে সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর অন্য দু’টি নির্দেশে দেওয়া হয়েছে স্থগিতাদেশ। শেষের নির্দেশটি এসেছে রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ। এরপরই হাইকোর্ট ছাড়ার সময় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার কোনও মন খারাপ নেই। আমি কোনও ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য নিয়ে বিচার করতে বসিনি। আমি বিচার না করলেও মামলা তো আর থেমে থাকবে না। কোনও না কোনও বিচারপতিই সেই মামলা শুনবেন। তবে আমি যত দিন বিচারপতি থাকব, তত দিন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব থাকব।’’ এর পরেই বিচারপতি বলেন, ‘‘যখন বিচারপতি থাকব না, অন্য কাজ করব, তখনও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ব।’’
বাড়িতে ঢোকার মুখে ফের সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এবার বেশ কিছুটা যেন “অভিমানী”। বলেন, “আজ তো আমার মৃত্যুদিন।” তাঁর এজলাস থেকে মামলা সরার খবর ছড়িয়ে পড়তেই হতাশায় ভেঙে পড়েন আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁর এজলাসে ফের মামলা ফেরানোর দাবিতে প্ল্যাকার্ড হাতে মহানগরের রাস্তাতেও নামেন আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীরা। সেই চাকরিপ্রার্থীদের উদ্দেশে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “কারও যদি ব্যক্তিগত ভাবে মন খারাপ হয়ে থাকে বা হতাশ হয়ে থাকেন, তবে আমার পরামর্শ, হতাশ হবেন না। মামলা চলছে বিচারও হবে।’’ পাশাপাশি “আমৃত্যু অপেক্ষা করতে হতে পারে” বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ শিরোধার্য। সুপ্রিম কোর্টের কথা হাইকোর্ট মেনে চলে। তাই আমিও মেনে চলব।” এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট যুগ যুগ জিয়ো।’’