Sambad Samakal

Mamata Banerjee: মনোনয়নে হিংসায় জড়িত নয় তৃণমূল! কী দাবি মমতার?

Jun 15, 2023 @ 9:05 pm
Mamata Banerjee: মনোনয়নে হিংসায় জড়িত নয় তৃণমূল! কী দাবি মমতার?

বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদের জেরেই ইসলামপুর এবং চোপড়ায় মনোনয়ন ঘিরে হিংসার ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘর্ষগুলির সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস যুক্ত নয়। বৃহস্পতিবার এমনটাই দাবি করলেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা বলেন, ‘‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি মিলিতভাবে ১ লক্ষেরও বেশি মনোনয়ন পেশ করেছে। বাংলায় এত বেশি সংখ্যায় মনোনয়ন পেশ আগে কখনও দেখা যায়নি। এর থেকেই প্রমাণিত যে কোনওরকম রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ ছাড়াই মনোনয়ন পেশ করার প্রক্রিয়া চলছে।’’

একের পর এক পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তৃণমূল নেত্রী। বলেন, “পশ্চিমবঙ্গজুড়ে ৭৩,০০০ থেকে ৭৪,০০০ বুথ রয়েছে। এই বুথগুলির মধ্যে মাত্র তিনটি অঞ্চল থেকে আমরা বিক্ষিপ্ত হিংসার খবর পেয়েছি। সেখানেও, নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় কিছু সমস্যা। আমি একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিতে চাই, এইসব হিংসার ঘটনার সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও সম্পর্ক নেই।”

তিনি আরো জানান, “দলীয় নেতৃত্ব বুথস্তরের কর্মীদের কড়া নির্দেশ দিয়েছে, তাঁরা যাতে কোনও প্রকার হিংসায় না জড়ান এবং সামগ্রিক মনোনয়ন পেশের প্রক্রিয়া যাতে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়, তা নিশ্চিত করেন।” মমতা বলেন, “বাংলায় সর্বদাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় হিংসার ইতিহাস রয়েছে। আমরা এই বিষয়টি বদলানোরই আপ্রাণ চেষ্টা করছি। ২০০৩ সালের কথা আমার মনে পড়ছে, যখন রাজ্যের ক্ষমতায় ছিল সিপিএমের সরকার, ভোটের দিন প্রায় ৩৬ জনের প্রাণ গিয়েছিল। একইভাবে ২০০৮ এবং ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের সময়েও বহু প্রাণহানির খবর পাওয়া গিয়েছিল। বস্তুত, ২০১৩ সালে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার ছিলেন মীরা পাণ্ডে, রাজ্য নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিতে পঞ্চায়েত নির্বাচন করিয়েছিল। তা সত্ত্বেও প্রায় ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল।”

মমতা মনে করিয়ে দেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের একটি বৈশিষ্ট্য হল, গ্রামীণ প্রশাসনের সঙ্গে একেবারে তৃণমূলস্তরের যোগাযোগ থাকে। নির্বাচনের সময় একই পরিবারের সদস্যরা একে-অপরের বিরুদ্ধে প্রার্থী হন, এমন উদাহরণ প্রায়ই দেখা যায়। এর ফলে স্থানীয় বিভিন্ন পরিবারগুলির বিবাদ থেকে মাঝেমধ্যেই হিংসা ছড়ায়।” তিনি বলেন, ” ইসলামপুর এবং চোপড়া থেকে হিংসার খবর এসেছে। আমি আরও একবার স্পষ্ট করে দিতে চাই, এসবের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও সম্পর্ক নেই।” তাঁর স্পষ্ট বার্তা, “যাঁরা অশান্তিতে যুক্ত থাকবেন, তাঁদের কাউকেই তৃণমূল কংগ্রেস টিকিট দিচ্ছে না। এই হিংসাকামীরা দলের কাছ থেকে টিকিট চেয়েছিলেন, কিন্তু, তাঁদের আচরণ নিয়ে নানা বিরূপ খবর শোনা যায়, আর তাই তৃণমূল কংগ্রেস তাঁদের টিকিট দেয়নি। যে নেতারা কখনও জনগণ ও সমাজের জন্য কাজ করেননি, তাঁরা দলের তরফ থেকে টিকিট পাননি। আমরা হয়তো আরও কয়েকটি নাম বাদ দিতে পারিনি, কিন্তু আমি নিশ্চিত করতে পারি যে ৯৯%-এর বেশি মনোনয়ন বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তিদের দেওয়া হয়েছে।”

আরো একবার ইসলামপুর এবং চোপড়ার অশান্তির প্রসঙ্গ তোলেন মমতা। বলেন, “বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে এই অশান্তি। তৃণমূল কংগ্রেস এর সঙ্গে জড়িত নয়। আমি পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলেছি এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” মমতা এদিন মুখ খোলেন ভাঙড়ের অশান্তি প্রসঙ্গেও। বলেন, “ভাঙড়ের ঘটনা বিরোধীদের কাজ। আগের দিন, এই বিরোধী নেতারা গাড়ি ভাঙচুর করেছিলেন এবং সমাজের একটি অংশকে উত্তেজিত করতে সাম্প্রদায়িক স্লোগান দিয়েছিলেন। গতকাল একটি পাল্টা প্রতিবাদ হয়েছে, যেখানে কিছু হিংসার ঘটনা ঘটেছে। তবুও সেই ঘটনার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেবে।”

উত্তরপ্রদেশ ও ত্রিপুরার ভোটের উল্লেখ করে তৃণমূল নেত্রী বলেন,
“আমরা উত্তরপ্রদেশ এবং ত্রিপুরার ঘটনা দেখেছি, যেখানে বিরোধীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করারও অনুমতি দেওয়া হয়নি। ত্রিপুরায় ৯০% আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে। কিন্তু বাংলার ক্ষেত্রে এটা হয় না।” পাশাপশি তাঁর অভিযোগ, “বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার পকসো অভিযুক্ত নেতাদের মুক্ত হতে দিয়েছে। বাংলায় ইতিমধ্যে বিজেপি সরকার হিংসার ঘটনায় তদন্তের জন্য ১৫১টিরও বেশি কেন্দ্রীয় দল পাঠিয়েছে। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে আদালতের বাইরে লোকেদের গুলি করা হচ্ছে, তবুও আমরা দেখছি সেখানে কোনও কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হচ্ছে না।”

মমতা এদিন সিপিএম তথা বামফ্রন্টকেও একহাত নিতে ছাড়েননি। বলেন, “বর্তমানে বাংলার বিরোধীরা, যারা তাদের শাসনকালে রাজনৈতিক হিংসা চালিয়েছিল, তারা এখন আমাদের উপদেশ দিচ্ছে। মনে রাখতে হবে যে এক হাতে তালি বাজে না
অতীতে আমি ব্যক্তিগতভাবে সিপিএম গুন্ডাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছি, তবুও আমি চুপ থেকেছি। কারণ আমি পরিবর্তনে বিশ্বাস করি, প্রতিশোধে নয়।” ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা বলেন, “সমস্ত বিরোধী শাসিত রাজ্য একই গল্প দেখছে। তামিলনাড়ু হোক, দিল্লি হোক বা বাংলা, কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির দ্বারা শুধুমাত্র বিরোধী নেতাদের টার্গেট করা হচ্ছে। ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের মনে রাখা উচিত জনগণ সব দেখছেন এবং যথাসময়ে জবাব দেবেন।”

Related Articles