জয়মাল্য দেশমুখ
আজ, সোমবার যন্ত্রের দেবতা বিশ্বকর্মার পুজো। শুধু যন্ত্রের দেবতা বললে ভুল হবে, শিল্প-কারখানা, নতুন নতুন উৎপাদনের দূরন্ত গতির অন্যতম প্রতীক জাঁকজমকপূর্ণ বিশ্বকর্মা পুজো। তবে বিগত কয়েক বছর ধরেই কি গণেশ পুজোর বাড়বাড়ন্তে খানিকটা কোনঠাসা হয়েছেন বিশ্বকর্মা! অনেকটাই কি জাঁক হারিয়েছে যন্ত্রের দেবতার পুজো! বিশেষ করে শহর কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছলে সাদা চোখেই সেই পার্থক্যটা ধরা পড়বে।
একসময়ে দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর থেকে গড়িয়া পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ছিল একাধিক নামী উৎপাদন সংস্থার কারখানা। শ্রমিকদের আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ বিশ্বকর্মা পুজো চোখ ধাঁধিয়ে দিত এলাকাবাসীর। তবে এখন আর সেই দিন নেই। উষা কোম্পানির কারখানা উঠে গিয়ে হয়েছে সাউথ সিটি, ছোট একটি ইউনিট কোনওমতে এখনও সচল রয়েছে বাঁশদ্রোণী এলাকায়। বেঙ্গল ল্যাম্প ও কৃষ্ণা গ্লাসের জমিতে এখন শ্মশানের নীরবতা। সুলেখা কোম্পানির মূল কারখানা ছোট হতে হতে কোনওমতে টিমটিম করে বাতি জ্বালিয়ে রেখেছে এখনও। শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে সরতে সরতে বহু দূরে আরও দক্ষিণের দিকে সরে গিয়েছে উৎপাদনের কেন্দ্রবিন্দু। তবে কারখানা উঠে গেলেও, কোথায় গেলেন সেইসব বন্ধ কারখানার শ্রমিকরা? জাঁকজমকপূর্ণ বিশ্বকর্মা পুজোর কথা মনে পড়লে, আজও কি তাদের বুকের ভেতরে মোচড় দিয়ে ওঠে না!
এমনই কয়েক জন বন্ধ কারখানার বৃদ্ধ শ্রমিকের সঙ্গে কথা বললেই, তাঁরা যেন টাইম মেশিনে চাপিয়ে আমাদের নিয়ে যেতে চান অনেকটা পেছনে। কীভাবে কারখানায় জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে বিশ্বকর্মা পুজো হত, সারাবছরের হাড়ভাঙা খাটুনির মধ্যে পুজোর কয়েকটা দিন কীভাবে আনন্দ মেতে উঠতেন, পুজোর দিনগুলোতে কী কী খাওয়া-দাওয়া হত, আজও সেই সমস্ত মধুর স্মৃতিরোমন্থন করে চলেছেন অনেকে।
যদিও আজ তাঁদের বিশ্বকর্মা পুজোর দিনটা কাটে অন্ধকারে। পেশার তাগিদে বেশিরভাগ শ্রমিকই চলে গিয়েছেন অন্যত্র, অনেকেই পৃথিবীর মায়া কাটিয়েছেন। তবু আজও যাঁরা রয়ে গিয়েছেন, তাদের দু’চোখে শুধুই হতাশা। আজ দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে গণেশ পুজোর জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে কি ঠাঁই হবে অন্ধকারে ডুবে যাওয়া সেই শ্রমিকদের বা তাঁদের পরিবারে সদস্যদের!