পাঞ্চেত ড্যামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আদিবাসী সমাজের পক্ষ থেকে দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে মালা পরিয়ে বরণ করে নিয়েছিলেন তিনি। পাল্টা সম্মান জানাতে সেই মালা তাঁর গলায় পরিয়ে দেন নেহরু। আর তাতেই নেহরুর সঙ্গে মালাবদলের অপবাদ দিয়ে নিজের সমাজ ত্যাগ করে ওই আদিবাসী মহিলাকে। তিনি বুধনি মেঝান। “নেহরুর বউ” তকমা দিয়ে একঘরে করে দেওয়া হয় তাঁকে। এমনকী গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। বেঁচে থাকাটাই তাঁর কাছে হয়ে দাঁড়ায় একটা লড়াই। এবার সেই লড়াইয়ে ইতি পড়ল। শুক্রবার রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বুধনি।
দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ ছিলেন। চিকিৎসাধীন ছিলেন বেসরকারি একটি নার্সিংহোমে। সেখানেই প্রয়াত হলেন এই লড়াকু আদিবাসী বৃদ্ধা।
১৯৫৯ সালের ৬ ডিসেম্বর ডিভিসির পাঞ্চেত জলাধারের উদ্বোধনে আসানসোলে এসেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেহরু। সেই অনুষ্ঠানেই আদিবাসীদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বুধনি মেঝান। তাঁর হাত থেকে জওহরলাল নেহরু পাঞ্চেত ড্যামের উদ্বোধন করেছিলেন। কিন্তু মালা পরানোর ঘটনাটি এতটাই আচমকা ঘটে গিয়েছিল যে, নিজেই হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন বুধনি। তবে বিনা দোষে এত বড় শাস্তি পেতে হবে, দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি। এরপরই শুরু হয় দীর্ঘ লড়াইয়ের। গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার পর হারিয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তাঁকে খুঁজে বের করেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। চাকরি দিয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয় সমাজের মূলস্রোতে। সময়ের নিয়মে সেই চাকরি থেকেও অবসর নেন বুধনি। তবে অবসর নিলেও ডিভিসির আবাসনেই থাকতেন। বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। সব কিছুর মায়া কাটালেন শুক্রবার রাতে। পাঞ্চেত শ্মশানেই হয় তাঁর শেষকৃত্যের আয়োজন। ডিভিসির পক্ষ থেকে তাকে সম্মান জানানো হয়। সম্মান দেওয়া হয় স্থানীয় পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেও।