হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই গোটা বাংলাদেশ জুড়ে কার্যত তাণ্ডব চলছে। আক্রান্ত হচ্ছে সংখ্যালঘুদের ঘর-বাড়ি সহ সরকারি প্রতিষ্ঠান। বাদ যাচ্ছেন না শিল্পীরাও! বাংলাদেশের বিখ্যাত গানের দল ‘জলের গান’-এর প্রতিষ্ঠাতা রাহুল আনন্দের বাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয় একদল উত্তেজিত জনতা। কার্যত এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন, সস্ত্রীক রাহুল ও তাঁদের ১৩ বছরের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে রাহুলে নিজের হাতে তৈরি অন্তত ৩ হাজারেরও বেশি বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কার্যত পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে ‘জলের গান’-এর রেকর্ড, গানের নথিপত্র সহ সমস্ত কিছুই।
এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করে রাহুল আনন্দ ও জলের গানের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ সহ গোটা বিশ্বের শিল্পী মহল। বাংলাদেশের বিখ্যাত গায়ক ও সুরকার অর্ণব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ করে রাহুলের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন। পাশাপাশি ‘খাল কেটে কুমির’ আনারও খোঁচাও দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বেই নিজেদের স্বকীয় সৃষ্টির জোরে সুনাম অর্জন করেছিলেন রাহুল আনন্দ ও জলের গান। গত বছর রাহুলের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে এসে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে গিয়েছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। আর সেই শিল্পীর বাড়ি ও তাঁর সৃষ্টি কার্যত পুড়ে ছাই হয়ে গেল একদল মানুষের ঘৃণার আগুনে।
এই মর্মান্তিক ঘটনার পরে ‘জলের গান’-এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, “এই বাদ্যযন্ত্র, গান বা সাজানো সংসার হয়তো আমরা দীর্ঘ সময় নিয়ে আবার গড়ে নিতে পারবো। কিন্তু, এই ক্রোধ আর প্রতিহিংসার আগুনকে নেভাবো কিভাবে! কেন আমরা ভালবাসা আর প্রেম দিয়ে সবকিছু জয় করে নিতে পারি না? যেই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখি, সেই স্বাধীনতার রক্ষায় যদি একইভাবে এগিয়ে আসতে ব্যর্থ হই, তাহলে চরম নিরাশা, অপমান ও লজ্জায় নিজেদের গানই গেয়ে উঠি এক ভগ্ন হৃদয়ে- ‘কোন্ ছোবলে স্বপ্ন আমার হলো সাদা কালো? আমার বসত অন্ধকারে; তোরা থাকিস ভালো!’ সকল প্রাণ ভালো থাকুক। নতুন আগামীর স্বপ্নকে আমরাও অভিবাদন জানাই একইভাবে। কিন্তু, নিজের উল্লাসের চিৎকার এবং সজোর হাততালিতে কারো স্বপ্ন ভেঙে না দেই!”