নাম বদলেই ভাড়া নেওয়া হয়েছিল নিউটাউনের সুখবৃষ্টি আবাসনের ফ্ল্যাট। মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র থেকে ধৃত ভরত কুমারকে জেরা করে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্যই হাতে এল তদন্তকারীদের। বৃহস্পতিবার তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, গোয়ালিয়রে ধৃত ভরত কুমারই আদতে সুমিত কুমার। আদতে ভরতই সুমিত নামে নিউটাউনের সাপুরজির ওই অভিজাত বিলাসবহুল আবাসনে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন। আর সেখানেই নিশ্চিন্তে ঘাঁটি গেড়েছিল পঞ্জাবের দুই গ্যাংস্টার। শুধু তাই নয়, বাংলার নম্বর প্লেট লাগানো গাড়ি ব্যবহার করেই দুই গ্যাংস্টার জসপ্রীত ও জয়পালকে নিয়ে সে মধ্যপ্রদেশ থেকে ঝাড়খণ্ড হয়ে সোজা পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে। এই গাড়ি নিয়েও রয়েছে বহু ধোঁয়াশা।
নিউটাউন এনকাউন্টারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই চাঞ্চল্যকর এই তথ্য হাতে এসেছে তদন্তকারীদের। যার মধ্যে অন্যতম হল, তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, জসপ্রীত বা জয়পাল নয়, অভিজাত বিলাসবহুল ও ফ্ল্যাটটি আদতে ভাড়া নিয়েছিলেন সুমিত কুমার নামে এক ব্যক্তি। আর তারপরই সুমিত কুমারের খোঁজ শুরু হয়। কিন্তু এরমধ্যেই তদন্তকারীরা জানান, সুমিত কুমার ওরফে ভরত কুমার ইতিমধ্যেই জালে ধরা পড়েছে।
ধৃত ভরতকে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, পঞ্জাব পুলিশের দুই অফিসারকে খুনের পর জসপ্রীতরা চার জন পালিয়ে আশ্রয় নেয় মধ্যপ্রদেশে। তারপর সেখান থেকে জসপ্রীত এবং জয়পালকে নিয়ে বাংলার নম্বরপ্লেট দেওয়া গাড়ি করে ঝাড়খণ্ড হয়ে বাংলায় আসে ভরত। কিন্তু মধ্যপ্রদেশ থেকে কীভাবে বাংলার গাড়ি হাতে পেল গ্যাংস্টাররা? তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, WBO24500R – এই নম্বরের গাড়িটির রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। মূলত বাংলার গাড়ি হিসেবে পরিবহণ বিভাগের কাছে তা নথিভুক্ত করা থাকলেও প্রায়ই ভিনরাজ্যে ঘুরে বেড়াত এই গাড়ি। নতুন করে রেজিস্ট্রেশন না করানোয় তা বাংলার গাড়ি হিসেবেই রয়ে গিয়েছিল। তাই অনায়াসেই ওই গাড়ি ব্যবহার করে এরাজ্যে ঢুকে পড়েছিল দুষ্কৃতীরা। তারপর নিউটাউনের সাপুরজিতে স্থানীয় জমি-বাড়ির দালাল সুশান্ত সাহার মাধ্যমে অগ্রিম ২০ হাজার টাকা ও মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাড়ার বিনিময়ে ‘সুখবৃষ্টি’ আবাসনের ২০১ নম্বর ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয় ভরত ওরফে সুমিত। এন্টালির বাসিন্দা আকবর আলির কাছ থেকে ফ্ল্যাটটি সুমিত কুমারের নামে ভাড়া নেওয়া হলেও আদতে সেখানে জসপ্রীত ও জয়পাল। ভরত ওরফে সুমিত ফিরে যায় মধ্যপ্রদেশে। কিন্তু বুধবার দুপুরে গোয়ালিয়র থেকে ভরত ওরফে সুমিত কুমার গ্রেফতার হওয়ার পরই নিউটাউনের আবাসনে এসটিএফের অভিযান এবং ১৫ মিনিটের এনকাউন্টারে দুই দুষ্কৃতীর খতম হওয়ার ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার সাপুরজির ওই ফ্ল্যাটে তদন্তে যায় রাজ্য পুলিশের পাঁচ জনের ফরেনসিক দল। সেখান থেকে ফিংগার প্রিন্ট ও ফুট প্রিন্ট সংগ্রহের পাশাপাশি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা রক্তের নমুনা ও দুটি ফাটা বুলেটের নমুনাও সংগ্রহ করেছেন। মিলিয়ে দেখা হচ্ছে হাতের ছাপও।