বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের শুরুতে রাজ্যপালের ভাষণ ঘিরে টানটান উত্তেজনা ছিলই। কিন্তু শুক্রবার নির্ধারিত সময়ে রাজ্যপাল সেই ভাষণ শুরু করতেই বিজেপি বিধায়কদের তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়। ভাষণে ভোট পরবর্তী হিংসা ও আইন শৃঙ্খলার উল্লেখ না থাকার প্রতিবাদে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিজেপি বিধায়করা। শেষমেষ বিজেপির বিক্ষোভের জেরেই মাত্র চার মিনিটেই ভাষণ বন্ধ করতে বাধ্য হন রাজ্যপাল। তৃণমূলের দাবি, এদিন কার্যত বিজেপি বিধায়করা কেন্দ্রেরই মনোনীত প্রতিনিধি, রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরকে অপমান করলেন। যদিও রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, কার্যত গট আপ করেই এই ঘটনা ঘটাল বিজেপি। তবে পুরো ভাষণ পড়তে না পারলেও রাজ্য মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত ১৪ পাতার বাজেট ভাষণের পুরোটাই বিধানসভায় ‘লে’ করেছেন, অর্থাৎ অনুমোদন দিয়েছেন রাজ্যপাল।
এদিন দুপুর ১টা ৪৮ মিনিটে বিধানসভা ভবনে পৌঁছয় রাজ্যপালের কনভয়। সেই সময় বিধানসভাতেই ছিলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুজনেই বেরিয়ে এসে রাজ্যপালকে স্বাগত জানান। রীতি মেনে প্রথমে রাজ্যপাল বিধানসভায় থাকা আম্বেদকরের মূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রধ্যা জানান। পরে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন স্পিকার ও মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপালকে এগিয়ে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও স্পিকারের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। সূত্রের খবর, মিনিট দুয়েকের কথোপকথনে রাজ্যপালের প্রশ্নের উত্তর দেন মমতা। এরপর তিনজনই কক্ষে প্রবেশ করেন। কক্ষে সব মিলিয়ে মাত্র ৪ মিনিট ১২ সেকেন্ড ছিলেন রাজ্যপাল। এর মধ্যে চার মিনিট তিনি ভাষণ পাঠ করেন।
রাজ্যপাল ভাষণ শুরু করতেই ভারত মাতা কি জয় স্লোগান তুলে বিক্ষোভ শুরু করেন বিজেপি বিধায়করা। তুমুল বিক্ষোভের মুখে পড়ে বাজেট বক্তৃতার প্রথম অংশ ও শেষের কিছু অংশ পড়েই থামতে হয় রাজ্যপালকে। এরপর তিনি কক্ষ ত্যাগ করেন। রীতি মেনেই তাঁকে বিদায় জানান স্পিকার ও মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময়ই ট্রেজারি বেঞ্চের তিন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শিউলি সাহা, শশী পাঁজা ছাড়াও বিধায়ক অসীম পাত্র, উত্তরা সিংরা জয় বাংলা স্লোগান তোলেন। পরে সংবাদ মাধ্যমের সামনে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘ঘুরিয়ে বিজেপি বিধায়করা এদিন তাঁদের লোক ধনকরকে অপমান করলেন।’ অন্যদিকে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘রাজ্য সরকারের লিখে দেওয়া বাজেটে ভোট পরবর্তী হিংসা ও রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার অবনতির উল্লেখ নেই। উল্টে এ নিয়ে মিথ্যা প্রচার চালানোর অভিযোগ করা হয়েছে। রাজ্যপাল অত্যন্ত সংবেদনশীল মানুষ। তাঁর নিশ্চয়ই এই ভাষণ পছন্দ হয়নি। তাই হয়তো তিনি পুরো ভাষণ পড়েননি।’