Sambad Samakal

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস থেকে বাঁচবেন কীভাবে? জানুন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

May 31, 2021 @ 1:24 pm
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস থেকে বাঁচবেন কীভাবে? জানুন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

মহামারী হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। ক্রমশ এই মারণ রোগ জাঁকিয়ে বসছে বাংলাতেও। একদিকে করোনা, অন্যদিকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চোখ রাঙানি। এই পরিস্থিতিতে নিজেকে এই মহামারীর হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখাটাই হয়ে উঠেছে বড় চ্যালেঞ্জ। কীভাবে মোকাবিলা করবেন এই চ্যালেঞ্জের? কীভাবে বাঁচাবেন নিজেকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের হাত থেকে? জানালেন বিশেষজ্ঞরা।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, করোনা থেকে সেরে ওঠার পর দেহে সংক্রমিত হচ্ছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। তবে যে কোনও সুস্থ মানুষের শরীরেও এই মারণ ব্যাধি থাবা বসাতে পারে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। সাধারণত, যাঁরা নিয়মিত স্টেরয়েড নিয়ে থাকেন, যাঁদের ডায়াবেটিস আছে বা যাঁরা ক্যানসারে আক্রান্ত, তাঁদেরই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। আর যেহেতু এই কালো ছত্রাক মুখ থেকে শরীরে প্রবেশ করে, তাই ডেনটিস্টরা বেশি করে জোর দিচ্ছেন ওরাল হাইজিনের ওপর। এক নজরে দেখে নেব, কী কী নিয়ম মানতে বলছেন দন্ত চিকিৎসকরা।
কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরই সবার আগে টুথব্রাশ বদলে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন ডেন্টিস্টরা। সেই সঙ্গে দিনে ২ বার দাঁত মাজতে হবে এবং ভালো করে কুলকুচি করে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। ব্যবহার করতে হবে মাউথ ওয়াশও। শুধু দাঁতই নয়, টাং ক্লিনার দিয়ে নিয়মিত জিভ পরিষ্কারের কথাও বলছেন চিকিৎসকরা। এক্ষেত্রে বাজার চলতি যে কোনও টাং ক্লিনার নয়, ওষুধের দোকান থেকে মেডিকেটেড ভালো টাং ক্লিনার কিনতে বলেছেন ডেন্টিস্টরা। জিভ পরিষ্কারের পর টাং ক্লিনার ভালো করে ধুয়ে রাখার পরামর্শও দিয়েছেন তাঁরা।
সঙ্গে প্রতিবার খাবার খাওয়ার পর মুখ কুলকুচি করার কথাও বলা হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, মুখ শুকনো রাখা যাবে না, বারবার জল খেতে হবে।
বিশিষ্ট দন্ত চিকিৎসক তথা ইন্ডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ)-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক ডা. রাজু বিশ্বাস বলেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিস আসলে একটি ছত্রাকজনিত সংক্রমণ। এই ছত্রাক আমাদের পরিবেশে সর্বত্র বিরাজমান। কিন্তু সাধারণ মানুষ, যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অটুট রয়েছে তাঁদেরকে এই ছত্রাক আক্রমণ করতে পারে না। উল্টে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এই ছত্রাককে মেরে ফেলে। কিন্তু যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যে কোনও কারণেই হোক কমে গেছে, তাঁরা এই ছত্রাকের আক্রমণের শিকার হন সহজেই। ফলে এই রোগ প্রতিরোধের সবার আগে প্রয়োজন নিজের শরীরের ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা।
তিনি বলেন, এই সংক্রমণের উদ্বেগজনক দিকটি হলো, এই রোগের কারণে অনেক সময়ই মৃত্যু হতে পারে, অথবা চিরতরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যেতে পারে। এই সংক্রমণ মূলত নাক এবং তার চারিপাশের সাইনাস অঞ্চল থেকে শুরু হয়।তারপর এটি আমাদের মুখগহ্বরে, তালুতে গিয়ে ঘা এর সৃষ্টি করতে পারে। সেক্ষেত্রে দাঁত নড়ে যেতে পারে, হাড় ক্ষয়ে কালো রংয়ের ঘা সৃষ্টি করতে পারে, এছাড়াও নাক থেকে কালো পুঁজ বের হতে পারে। মুখের এক পাশের চামড়া কালো হয়ে যেতে পারে। এই রোগ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে চোখে, যা ভবিষ্যতে রোগীকে অন্ধও করে দিতে পারে। এবং মস্তিষ্কও সংক্রামিত হতে পারে সহজেই, তাই এই রোগকে প্রতিহত করতে দ্রুত রোগ নির্ণয়, সঠিক ওষুধ এবং শল্য চিকিৎসার গুরুত্ব অপরিসীম।
তবে এই চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের দাম এক্ষেত্রে একটি বড় অন্তরায় হয়ে ওঠে বলে জানান ডা. রাজু বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘মূলত লাইপোসোমাল অ্যাম্ফোটেরিসিন-বি হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকরী এবং প্রধান ওষুধ, যার দাম মধ্যবিত্তের ধরাছোঁয়ার বাইরে। এর পরিবর্তে ব্যবহৃত কম দামের ওষুধগুলি আবার শরীরের, বিশেষ করে কিডনির পক্ষে ক্ষতিকারক। এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের উচিত লাইপোসোমাল অ্যাম্ফোটেরিসিন-বি উৎপাদন বাড়ানো, এবং মূল্যহ্রাসের জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।’

Related Articles