Sambad Samakal

মমতা কি ব্যাকফুটে?

Apr 1, 2021 @ 11:05 am
মমতা কি ব্যাকফুটে?

নন্দীগ্রাম মহারণের প্রাক্কালে

ক’দিন ধরেই কানাঘুসো চলছে। চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে অগ্নিকন্যার শরীরি ভাষা নিয়েও। তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দাবিদার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি কিছুটা পিছিয়ে আছেন নন্দীগ্রামের ‘বিগ ব্যাটেলে’? প্রশ্ন জাগছে। মার্চের শুরুতে যখন মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে নন্দীগ্রাম বাস স্ট্যান্ডে যে কর্মী সভা করেছিলেন সেখান থেকেই একটু অন্য সুরে বেজেছেন ‘দিদি’। তুলে এনেছিলেন ৭০ শতাংশ আর ৩০ শতাংশের পাটিগণিত। তাঁর মতো আন্দোলন বুকে বয়ে নিয়ে চলা নেত্রীর মুখে এই ধরনের মেরুকরণকে উস্কে দেওয়া মন্তব্য বেমানান তা নেত্রীর একনিষ্ঠ বৃত্তে থাকা অনেকেই স্বীকার করেছেন। তবে কি নন্দীগ্রাম থেকে লড়ার কথা ঘোষণার আগে এই পাটিগণিত মনে ছিল না?

পরের ধাপ প্রথম দফা নির্বাচনের দিন প্রচার হওয়া অডিও টেপ। যেখানে খুব তৃণমূল স্তরের নেতাকে দলে ফিরে আসার আহ্বান করছেন সুপ্রিমো। পরে তিনি নিজেই জানিয়েছেন যে ফোন তিনিই করেছিলেন। করতেই পারেন। অভিমানে, ক্ষোভে দলছুট সৈনিকদের ‘ঘর ওয়াপসি’তে চেষ্টা করায় সমস্যা নেই। এতে বিতর্ক তৈরি করাও অমূলক। কিন্তু যেভাবে লড়াই করে তাঁর উত্থান সেখানে এভাবে আকুল আবেদনে কি নিজের বর্তমান সৈনিকদের প্রতি অনস্থা প্রকাশিত হচ্ছে না?

বাম আমল থেকেই ভোট ম্যানেজারদের রাজনৈতিক কদর আলাদা। মুখ্যমন্ত্রীর প্রবল প্রতিপক্ষ শুভেন্দু অধিকারী ধারে-ভারে বা রাজনৈতিক প্রতিপত্তিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক’য়েক কিলোমিটারের মধ্যে আসেন না। কিন্তু তিনি বরাবরই দুর্দান্ত ভোট ম্যানেজার। ভোটের পাটিগণিত তিনি ভালোই বোঝেন। আর মুখ্যমন্ত্রীর শতাংশের শর্টপিচ বল তিনি খুব ভালোই চিনতে পেরেছেন। ফলশ্রুতি তিনিও স্টেপ আউট করে সপাটে ধর্মের শট মারছেন। কখনো ‘পাকিস্তানের জঙ্গী’ তো কখনো সরাসরি ‘হিন্দু তাস’ তাঁর আস্তিন থেকে বেরিয়ে আসছে। তাই তো তিনি আশা করেছিলেন নন্দীগ্রামে বামেদের বরাবরের মতো সংখ্যালঘু প্রার্থী থাকবে। হয়তো আইএসএফ প্রার্থী দেবে। কিন্তু তেমনটা না হওয়াতে তিনি কিছুটা হতাশ তিনিও অভিযোগ করেছেন বামেদের সঙ্গে তৃণমূলের গোপন আঁতাতের।

তবুও মুখ্যমন্ত্রী সহজ হতে পারছেন না। নিজের কেন্দ্রে প্রচারের শেষ বেলা মাটি কামড়ে থাকলেন – কৃষিজমি আন্দোলনের নেত্রী। নন্দীগ্রামের ১৪ বছর আগের গুলি চালনা নিয়েও বলে ফেললেন নিজের একদা সহযোদ্ধাকে জড়িত থাকার ইঙ্গিত। কিন্তু সেই বিষয়ে জলঘোলা ছাড়া বিশেষ কিছু হলো না। বামেরা কিছুটা উৎসাহ পেল।

সবশেষে নিজের কেন্দ্রে ভোটের ক’য়েক ঘন্টা আগে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী সহ এক ঝাঁক জাতীয় নেতৃত্বকে খোলা চিঠি লিখলেন বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে। তবে কি কংগ্রেসের ভোট ব্যাংকে হানা দেওয়ার প্রয়াস? না নির্বাচনের ফল ত্রিশঙ্কু হলে কংগ্রেসের সহায়তা নেওয়ার আগাম আমন্ত্রণ?

পরিস্থিতি যাই হোক নন্দীগ্রাম আজ থমথমে। নির্বাচনের আগে গোটা কেন্দ্র জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। “এবার ভোট দিতে গ্রামে যাব না। কালও আমাদের গ্রামে বোমা ফেটেছে। পরিস্থিতি ভালো নয়। বাড়ির লোকই বারণ করেছে ভোট দিতে যেতে,” খানিকটা উদ্বেগ বেরিয়ে এল নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ার অরুণ বর্মনের মুখে। অরুণ কলকাতার রেস্তোরাঁয় চাইনিজ শেফ। তাঁর পরিবারের আরও অনেকেই কলকাতা, দিল্লী চেন্নাইতে পরিযায়ী শ্রমিক। না তাঁরা কেউ ভোট দিতে যাচ্ছেন না। তবে কি নন্দীগ্রামে ১লা এপ্রিল ভোটের হার কমতে পারে? মনে হয় না। তবে পরিস্থিতি যদি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভোটদান কম হবে। কিন্তু তাতে খুব একটা সুবিধা কোনো পক্ষই পাবে না।

পরিস্থিতি যাই হোক। নন্দীগ্রাম খানিকটা ধর্ম সঙ্কটেও বটে। আর এখানেই মমতার বিভিন্ন কর্মসূচি বোঝা যাচ্ছে। নিশ্চিতরূপেই আত্মবিশ্বাস খানিকটা টোল খেয়েছে অগ্নিকন্যার। কিন্তু এত সহজে উইকেট তিনি ছুঁড়ে দেবেন না। উইকেট কামড়ে থাকলে যে স্কোর বোর্ড সচল হয় সেটা তিনি জানেন। তাই লড়াইয়ে শেষ কামড়টা ‘দিদি’র কাছে প্রত্যাশিত। আর ভোট ম্যানেজের পাটিগণিত যতই কষে রাখুন না কেন নন্দীগ্রাম ভোটেও শুভেন্দুর কাছে কেকওয়াক হবে না।

Related Articles