সুশ্বেতা ভট্টাচার্য
লক ডাউনের সময় থেকে এপর্যন্ত একের পর এক অমানবিক সিদ্ধান্তের অভিযোগ তুলে এবার অশোক হল গ্রুপ অফ স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন অভিভাবকরা। স্কুলের বরখাস্ত হওয়া শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে অভিভাবকরা গড়লেন যুক্ত মঞ্চ। আর সেই মঞ্চ থেকেই স্কুলের ‘অনৈতিক’ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উঠল যৌথ আওয়াজ। প্রতিবাদী এই যুক্ত মঞ্চে যোগ দিয়েছেন অশোক হল গ্রুপ স্কুলের বরখাস্ত ১১০ জন শিক্ষিকা, অফিস কর্মী, কর্মচারী ও পড়ুয়াদের অভিভাবকরা। স্কুল কর্তৃপক্ষর এভাবে করোনাকালে কর্মী ও অভিভাবকদের মানসিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগে স্তম্ভিত হল শিক্ষামহল।
অভিযোগ, করোনা মহামারীর মধ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনও কারণ এবং নোটিশ ছাড়াই শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে। স্কুলের ম্যানেজমেন্টের ‘খামখেয়ালিপনা’য় বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক শিক্ষিকা ও কর্মীদের কারও চাকরির বয়স ২০ বছর, কারও বা ২৫-৩০ বছর। কিন্তু এতদিনের bঅভিজ্ঞ কর্মীদের বরখাস্তের নেপথ্যে কোনও কারণ জানানোর প্রয়োজনও বোধ করেনি স্কুলের ম্যানেজমেন্ট। সেই কারণেই শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অন্য কর্মচারীরা প্রতিবাদে সামিল হন। আর করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকলেও চাপ দিয়ে বেতন ও অন্যান্য ফি আদায় নিয়ে বীতশ্রদ্ধ ও বিরক্ত অভিভাবকরাও সামিল হয়েছেন সেই আন্দোলনে।
এক অভিভাবক বলেন, “একদিকে চাকরিচ্যুত কর্মচারীদের বলা হচ্ছে যে, অভিভাবকরা ফি পরিশোধ করেননি, তাই অর্থাভাবে কর্মচারীদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে, অভিভাবকদের বলা হচ্ছে, আমরা যদি ফি (বাড়ানো এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী) পরিশোধ না করি, তাহলে স্কুল তাদের কর্মচারীদের বোনাস দিতে পারবেন না। এটা তো দুই তরফে দুই রকম বোঝানো।”
তিনি আরও বলেন, “মহামারী চলাকালীন স্কুল ফি সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলায় সমস্ত অনুদানবিহীন প্রাইভেট স্কুলের ব্যবস্থাপনা WPA 5890 সম্পর্কিত হাইকোর্টের সামনে মিথ্যা হলফনামা জমা দিয়েছে এই স্কুল । তারা বারবার আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করেছে। ফলে ন্যায্য দাবি নিয়ে আজ আমাদের রাস্তায় নামতে হয়েছে।”
অভিভাবকদের একাংশের বক্তব্য, আগের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করে স্কুল চুক্তিভিত্তিক নতুন কর্মচারী নিয়োগ করে অভিভাবকরাও শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক এবং অন্য কর্মীদের আর্জি, “এই অনৈতিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইকে এগিয়ে নিতে আমরা সেই অভিভাবকদের অনুরোধ করছি, যাঁরা অশোক হল গ্রুপের অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে নিরলসভাবে লড়াই করছেন আদালতে, তাঁরা দয়া করে হাত মেলান এবং আমাদের পাশে থাকুন।”
সম্প্রতি অশোক হল গ্রুপ অফ স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারের অভিযোগে রানিকুঠির জি ডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশন থেকে একটি নীরব প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজনও করেন আন্দোলনকারীরা। রানিকুঠি, নেতাজি নগর হয়ে ফের স্কুলে ফিরে আসে ওই নীরব প্রতিবাদ মিছিল। আন্দোলনকারীদের হুঁশিয়ারি, “স্বৈরাচারী স্কুল ম্যানেজমেন্টের এই অনৈতিক গুন্ডামি চলতে থাকলে আমরা বৃহত্তর আন্দলনে যেতে বাধ্য হব।”