Sambad Samakal

Wasim Kapoor: মুনমুন সেনের ন্যুড পোট্রেট আর আঁকা হল না

Jan 24, 2022 @ 5:22 pm
Wasim Kapoor: মুনমুন সেনের ন্যুড পোট্রেট আর আঁকা হল না

নীলাদ্রিশেখর গঙ্গোপাধ্যায়

এই সহস্রাব্দের শুরুর দিকের ঘটনা। এক ঘরোয়া আড্ডায় চলচ্চিত্রাভিনেত্রী মুনমুন সেন আবদার করলেন, তাঁর একটা ন্যুড পোট্রেট আঁকতে হবে। শিল্পী দৃশ্যত বিব্রত। কোন পজিশনে মডেল হিসেবে অভিনেত্রী বসবেন তার একটি খসরা স্কেচও আঁকিয়ে নিলেন শিল্পীকে দিয়ে। কিন্তু মডেল হিসেবে অভিনেত্রী ‘সিটিং’ দিচ্ছেন না। এবার শিল্পী প্রস্তুত, কিন্তু মডেল ব্যস্ত নানা কাজে। এক ‘অর্বাচীন’ সাংবাদিক নিজস্ব সূত্রে খবর পেয়ে হানা দিল শিল্পীর প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিটের আস্তানায়। প্রথমে শিল্পী মুখ খুললেন না। কারণ, তখনও সেই প্রস্তাব নিয়ে এক অসম্ভব ঘোরের মধ্যে রয়েছেন শিল্পী।

মুনমুন সেন তাঁর কাছে শুধু নিছক অভিনেত্রী নন। যৌবনে দেখা অসংখ্য বাংলা ও হিন্দি সিনেমার বুকে দোলা লাগানো মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের কন্যা। তাই কোন প্রোফাইল থেকে মুনমুনকে তাঁর মায়ের মতো দেখতে লাগবে তাও জানালেন শিল্পী। পেশার তাগিদে সাংবাদিক সেই খবরটি এক বহুজাতিক মিডিয়া কোম্পানির ইংরেজি পোর্টালে মুচমুচে খবর হিসেবে লিখে ফেললেন।

এরপর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে বাড়ির ল্যান্ডলাইনে ফোনের বন্যা। একটি জাতীয় ইংরেজি সংবাদপত্র মুনমুন সেনের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি অস্বীকারও করলেন না। কিন্তু শিল্পী যথেষ্ট বিব্রত হয়ে গেলেন। লাল রঙের ল্যান্ড ফোনে ডায়াল ঘুরিয়ে সাংবাদিকের কাছে উষ্মা প্রকাশ করলেন। প্রচন্ড বিরক্ত তিনি গোটা ঘটনায়।

এরপর কেটে গেছে প্রায় বছর খানেক। শিল্পী এক আর্ট এক্সিবিশনের উদ্বোধনে গিয়ে সেই সাংবাদিকের সামনে। মুহূর্তে ভুলে গেলেন পুরনো ঘটনা। ক্রাচ সামলে দীর্ঘদেহের শিল্পী খর্বাকৃতি সাংবাদিককে জড়িয়ে ধরলেন। জোর করে নিয়ে গেলেন বাড়ি। আর কফির আড্ডায় সব স্বাভাবিক হয়ে গেল।

শিল্পী ওয়াসিম কাপুর ঠিক এই রকমেরই। সব সময় কালো রঙের লম্বা পাঠান স্যুট। মোটা জুলফি আর শারীরিক অসম্পূর্ণতাকে অগ্রাহ্য করে লখনউয়ের ‘তেহজিবের’ এক অনন্য উদাহরণ।

নবাবের রাজ্যে জন্মালেও আদ্যন্ত বাঙালি মননের অধিকারী এক শিল্পী তিনি। বাড়িতে কম্যুনিস্ট আবহ। বাবা অবিভক্ত কম্যুনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। পরে তাঁর বৌদি শীলা কাপুর কলকাতা কর্পোরেশনের বামপ্রার্থী হিসেবে পুরমাতা নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু ওয়াসিম কাপুর যত্ন সহকারে রাজনীতির ছোঁয়া এড়িয়ে গেছেন। রঙে-রেখায় নারীর কষ্ট আর অবদমিত একাকিত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন। কৃষ্ণ, রাধা-কৃষ্ণ থেকে দেবী দুর্গা ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন দশকের পর দশক। রঙের ব্যবহারেও তিনি ছিলেন উত্তর-আধুনিক। বুরখা বিরোধী আন্দোলনকে সমর্থনে তার সিরিজ জনপ্রিয়তার সঙ্গে প্রচুর বিতর্কও উসকে দিয়েছে। কিন্তু সুভদ্র এই শিল্পী আড়ম্বর ছাড়াই শিল্পে আর সৃষ্টিতেই মজে ছিলেন। শুধু সেই পোট্রেটটা তাঁর আঁকা হল না। ডামাডোলে শিল্পরসিকরা বঞ্চিত হলেন সেই সৃজন থেকে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *