Sambad Samakal

দিলীপেই আনন্দ সায়রার, জীবনকে চুটিয়ে উপভোগ ওয়াহিদা-হেলেনদের

Jul 9, 2021 @ 1:09 pm
দিলীপেই আনন্দ সায়রার, জীবনকে চুটিয়ে উপভোগ ওয়াহিদা-হেলেনদের

কেউ আশি পেরিয়েছেন, কারও ছুঁইছুঁই। তারুণ‌্যে টগবগ করছেন আশা-ওয়াহিদা-হেলেন। দিলীপ ঘরণী সায়রা আবার পতিপ্রাণা হয়েই বার্ধক‌্যে পৌঁছে গেলেন। জীবন উপভোগ নিয়ে একদা বলিউডের চার সেক্স-বম্ব বান্ধবীর দৃষ্টিভঙ্গি।
বিশ্লেষণে
দীপশিখা দত্তচৌধুরী

 
গত কয়েক বছর ধরেই অসুস্থ ছিলেন দিলীপ কুমার। স্মৃতি ক্রমেই ধূসর, ফুসফুসে ফ্লুইড জমা, সঙ্গে প্রস্টেট ক‌্যানসারের ছোবল। তাঁর ৯৮ বছরের জীবনের শেষ এক দশক অভিনেত্রী-সহধর্মিণী সায়রা বানু এক মুহূর্ত কাছছাড়া করতেন না। সেই সায়রাই এবার একা হয়ে গেলেন। বড্ড একা। প্রবীণ নায়িকার দুনিয়াজুড়ে শুধুই যে ছিলেন দিলীপ সাব।
“দিলীপ সাবের খেয়াল রাখা ছাড়া আর কোনওদিকে খেয়াল রাখত না সায়রা। নিজের শরীরেরও যত্ন নিত না। এবার যে ও কী করবে?” বলিউড লেজেন্ডের মৃত‌্যুর পর সেই চিন্তাই কুরে খাচ্ছে দিলীপ কুমারের সহ-অভিনেত্রী আশা পারেখকে।
ছয় ও সাতের দশকের সবচেয়ে সুন্দরী অভিনেত্রী হিসাবে বলিউড কাঁপিয়েছেন সায়রা। তাঁর জন‌্য মনখারাপ দিলীপের আর এক নায়িকা ওয়াহিদা রহমানেরও। সায়রা বানু-আশা পারেখ-ওয়াহিদা রহমান আর হেলেন চার জনেই সমসাময়িক অভিনেত্রী। চারজনেই দারুণ বন্ধু। সেই বন্ধুত্ব আজও অটুট। সায়রা ছাড়া বাকিরা নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ করেন। আর বছরে কয়েকবার অবশ‌্যই একসঙ্গে হই হই করে ছুটি কাটাতে যান। এ বছর এপ্রিলের গরমে আশা-ওয়াহিদা-হেলেন ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন আন্দামানে। তাঁদের বেড়ানো, স্নরকেলিংয়ের মতো ওয়াটার স্পোর্টসের ছবি দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, বয়স যেন ছুঁতে পারেনি চিরসবুজ মনের ত্রয়ীকে। আর সেই এঁদের দল থেকে অচিরেই বাদ পড়ে গিয়েছেন সায়রা বানু। দিলীপ সাবকে নিয়ে হাসপাতাল-বাড়ি করাই তাঁর জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পতিপ্রাণা সায়রা নিজের কথা ভাবেননি। তিন বেস্টি যখন দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন তখন দিলীপকে খাওয়ানো থেকে পরিচর্যা নিজে হাতে করতে ব‌্যস্ত তিনি। কারণ এতেই তিনি আনন্দ খুঁজে পেয়েছেন।
এখন সায়রার বয়স ৭৬। আশা ৭৮, ওয়াহিদা ৮৩, হেলেন ৮২। সংসারের বাঁধনে না জড়িয়ে আশা চিরকুমারী। চার্জনেই
সলমন খানের সৎমা নিঃসন্তান হেলেনও ঘরকুনো নন একদমই। আর সন্তান, নাতি-নাতনি নিয়ে ওয়াহিদার ভরা সংসার থাকলেও নিজের জন‌্য সময় বের করে নিয়ে এখনও উড়তে ভালবাসেন। জীবনটা উপভোগ করাই তাঁর মন্ত্র। তিনজনেই এখনও যেন দামাল যৌবন উপভোগ করছেন। বয়স! কুছ পরোয়া নেহি। সোশ‌্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা গিয়েছে ডিপ ব্লু জিনস, আকাশি লং শার্টের উপর বাঁধা কোমরবন্ধনী পরে বোটে চেপে আন্দামানের নীল সাগরে ভেসেছেন আশি পেরনো ওয়াহিদা। কখনও আবার নিজেই বসে পড়েছেন চালকের আসনে। লাইফ জ‌্যাকেট পরে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে চালাচ্ছেন জলযান। পাশে লাল টুকটুকে টপ, কালো পাজামা পরে পোজ দিচ্ছেন আশা। সানগ্লাস, সাদা কুর্তা, হলুদ পালাজোয় চিররঙিন হেলেনও।
আর শাম্মি কাপুরের সঙ্গে টক্কর দিয়ে অভিনয় করা ‘জংলি’র সেই ছটফটে, সুন্দর, মিষ্টি মেয়েটা বয়সে নিজের চেয়ে ২০ বছরের বড় দিলীপ কুমারকে বিয়ে করার পর থেকেই ধীরে ধীরে বদলে গিয়েছেন। সায়রার গর্ভের সন্তান নষ্ট হওয়ার পর আর চেষ্টা করেননি দিলীপও। সেই থেকে স্বামীই ছিল সবকিছু।
আশা-ওয়াহিদাও ব‌্যক্তিগত জীবনে প্রেমের ঘাত-প্রতিঘাতে শক্ত হয়ে গিয়েছেন। সংসারী হয়েও একা থাকার আনন্দ উপভোগ করতে ভোলেননি। হেলেন বাদে বাকি তিনজনেই ছিলেন দিলীপ কুমারের নায়িকা। প্রত‌্যেকেই পাঁচ থেকে সাতের দশকের সুপারহিট ছবির অভিনেত্রী। সেলিম খান পত্নী হেলেন অবশ‌্য সহ-অভিনেত্রী আর বলিউডের ডান্সিং কুইন হিসাবেই বেশি জনপ্রিয়তা পান। হেলেন এক সাক্ষাৎকারে জানান, “সায়রা তাঁকে জন্মদিনে ফুল পাঠান। তিনিও সায়রার জন্মদিনে ফুলোর তোড়া পাঠান। দিলীপ কুমারকে নিয়ে সায়রা ব‌্যস্ত থাকতে ভালবাসে। ওতেই ওর আনন্দ।” দিলীপ সাবের প্রয়াণের পর প্রিয় বান্ধবী কী করে সামলে উঠবে সেটা ভেবেই চোখ ছলছল ষাটের দশকের ডান্সিং কুইন হেলেনের। 

Related Articles