৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষককে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে না। তাঁদের চাকরি বহাল থাকছে। একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, নতুন করে মামলাটির শুনানি হবে কলকাতা হাইকোর্টে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং শিক্ষকদের একাংশের করা মামলায় এদিন এই রায় দেয় শীর্ষ আদালতের বিচারপতি জে কে মহেশ্বরী এবং কে ভি বিশ্বনাথনের ডিভিশন বেঞ্চ।
নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় প্রথমে এক ধাক্কায় ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। পরে সংখ্যা বদলে হয় ৩২ হাজার। চার মাসের মধ্যে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল পর্ষদকে। বিচারপতি জানিয়েছিলেন, চাকরিচ্যুতরা এই চার মাস স্কুলে যেতে পারবেন। তবে তাঁদের বেতন দেওয়া হবে পার্শ্বশিক্ষকদের বেতনকাঠামো অনুযায়ী। বিচারপতি এ-ও জানিয়েছিলেন, পর্ষদের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এই চাকরিচ্যুতরা অংশ নিতে পারবেন। নতুন ইন্টারভিউতে পাশ করলে চাকরিচ্যুতরা চাকরি ফিরে পাবেন।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন চাকরিহারাদের একাংশ। বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ মামলার শুনানিতে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে কিছুটা পরিবর্তন করে। তারা জানায়, ওই ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষককে পার্শ্বশিক্ষক হিসাবে কাজ করতে হবে না। তাঁরা যেমন ছিলেন, তেমনই থাকবেন। তবে পর্ষদকে নতুন করে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। সেই নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে এই ৩২ হাজার শিক্ষককেও। সেখানে তাঁরা ব্যর্থ হলে চাকরি হারাবেন।
এরপরই হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ। ক্যাভিয়েট দাখিল করেন পর্ষদ কর্তৃপক্ষও। শীর্ষ আদালতে মামলাটির শুনানি হয়। শুক্রবার সেই মামলার শুনানিতেই সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ হাইকোর্টের নির্দেশ খারিজ করে দিয়েছে।
প্রাথমিকের মূল মামলার মামলাকারীদের আইনজীবী ছিলেন তরুণজ্যোতি তিওয়ারি। তাঁর কোনো সাওয়ালই এদিন ধোপে টেকেনি। অন্যদিকে, ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের আইনজীবী হিসাবে মামলাটি লড়েছেন মুকুল রোহতগি, কপিল সিব্বল, অভিষেক মনু সিংবি, পি এস পাটোয়ালিয়া, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মীনাক্ষী আরোরা, জয়দীপ গুপ্তা, জয়দীপ মজুমদার, সোমেশ ঘোষ, কুণাল চ্যাটার্জি, পি ভুল্লার এবং পার্থ দেব বর্মণ।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এই শিক্ষকদের নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় হাই কোর্ট এত দিন যা যা নির্দেশ দিয়েছে, তা খারিজ করা হচ্ছে। হাই কোর্টের নতুন ডিভিশন বেঞ্চে নতুন করে মামলার শুনানি হবে। তাঁরা নতুন করে বিচার করবেন এবং নির্দেশ দেবেন।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, হাইকোর্টের রায়ে আদতে আইনের ভায়োলেশন হয়েছে। অন্যদিকে নতুন করে ইন্টারভিউ প্রসেস একটা লং সিস্টেম, সাথে সাথে অর্থ অপচয়। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, এই ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরিতে আর কোনও অসুবিধা নেই।
এদিন সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি তিওয়ারি সহ বিরোধীদের উকিলকে প্রশ্নবানে বিধ্বস্ত করেছেন। পাশাপাশি ৩২ হাজার শিক্ষকের পক্ষে দাঁড়ানো উকিলদের বাহবা দিয়েছেন, তাঁরা শিক্ষকদের হয়ে দেশের লিটারেসির পক্ষে সওয়াল করছেন বলে।