পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট চলছে। এরই মধ্যে যুদ্ধবিমান রাফাল নিয়ে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এল। রাফাল চুক্তির পর ক্রেতা তথা এক ভারতীয় মধ্যস্থতাকারীকে ১০ লক্ষ ইউরো ‘উপহার’ দিয়েছিল যুদ্ধবিমান প্রস্তুতকারী ফরাসি সংস্থা দাসো। যা ভারতীয় মুদ্রায় ৯ কোটি টাকার কিছু কম। কিন্তু কেন এই উপহার দেওয়া হয়, তার কোনও সন্তোষজনক জবাব আর্থিক তদন্তকারীদের দিতে পারেনি দাসো। ফলে এই ‘উপহার’ তথ্য যে ভোটের মধ্যে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিল তা বলা বাহুল্য।
ফ্রান্সের এক অনলাইন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে রাফাল নিয়ে দাসো-র ‘উপহার’ দেওয়ার তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। তিন দফায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়েছে, এই উপহারের কথা ২০১৭ সালের অক্টোবরেই জেনেছিল ফ্রান্সের দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষ। যদিও এ ব্যাপারে দাসো-র কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা জানায়, ওই অর্থ তাদের ভারতীয় সাব কন্ট্রাক্টরকে দেওয়া হয়েছে রাফাল বিমানের ৫০টি নমুনা তৈরি করার জন্য। সেই টাকার অঙ্ক ৫ লক্ষ ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪.৩৯ কোটি টাকা) বলে উল্লেখ করেছিল দাসো। তদন্তে পরে অবশ্য জানা যায়, অর্থের অঙ্ক যা দেখানো হয়েছে আসলে তার দ্বিগুণ। অর্থাৎ যুদ্ধবিমানের ছোট নমুনা বা রেপ্লিকা তৈরির জন্য মডেল পিছু ২০ হাজার ইউরো খরচ করেছে দাসো। কিন্তু ফরাসি যুদ্ধ বিমানের নমুনা তৈরির জন্য ভারতীয় সংস্থার প্রয়োজন কেন পড়ল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দাসো-ও কোনও সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। এমনকি ওই ৫০টি নমুনা তৈরি হয়েছে কিনা তার প্রমাণও দিতে পারেনি দাসো।
এদিকে, যে ভারতীয় সংস্থা ডেফসিস সলিউশনকে নিজেদের সাব কন্ট্রাক্টর বলে দাবি করেছে দাসো, তার প্রধান সুসেন গুপ্তা। ফরাসি সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ২০১৯ সালে অগস্তা ওয়েস্টল্যান্ড কাণ্ডে অর্থ তছরুপের ঘটনায় সুসেনকে গ্রেফতার করে ইডি। পরে জামিনে মুক্তি পান। এদিকে, ২০১৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাফালচুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পরই সুসেনকে ওই টাকা দিতে রাজি হয়েছিল দাসো। খবরটি প্রকাশ্যে আসতেই ফের রাফাল দুর্নীতি নিয়ে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে কংগ্রেস।
প্রসঙ্গত, নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চার বছরের মাথায় ফ্রান্সের সংস্থা দাসো-র থেকে ৩৬টি রাফাল কেনার চুক্তি হয় ভারতের। ২০২২ সালের মধ্যে ওই বিমান সরবরাহ করার কথা দাসো-র। যদিও এই রাফাল চুক্তি নিয়ে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল বিরোধীরা। এমনকি মোদি ওই চুক্তির মাধ্যমে ভারতীয় শিল্পপতি অনিল অম্বানীকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।