করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ট্রেন্ড হঠাৎ শ্বাসকষ্ট এবং আচমকা মৃত্যু। বহু ক্ষেত্রেই উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে থাকা করোনা রোগী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা এই সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন। আচমকা শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার পর পরিজনরা কখনও ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন অক্সিজেন জোগাড় করতে, কখনও আবার অ্যাম্বুলেন্সের ন্যূনতম অক্সিজেন সাপোর্ট নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হাসপাতালের দরজায় দরজায় ঘুরে বেড না পেয়েই জীবন যুদ্ধে হার মানছেন রোগী। কখনও আবার হাসপাতাল বা সেফ হোমে ঠাঁই পেলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। কারণ, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
সংকটের মূল কারণ, বহু ক্ষেত্রেই সঠিক সময়ে রোগীর মেডিক্যাল রুল মেনে অক্সিজেন সাপোর্ট শুরু হয় না। আসলে বাড়ির লোক বুঝতেই পারেন না, কখন রোগীর শরীরে অক্সিজেন ঘাটতি শুরু হয়েছে। বাড়িতে থাকা রোগীর ক্ষেত্রে কখন অক্সিজেন দেওয়া প্রয়োজন, বুঝবেন কী করে? পরামর্শ দিলেন দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ কুণাল সরকার ও ডাঃ অরিন্দম বিশ্বাস।
প্রথমেই প্রতি ঘন্টায় রোগীর শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ মাপার পরামর্শ দিচ্ছেন কোভিড বিশেষজ্ঞরা। কলকাতার মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কার্ডিও সার্জন ডাঃ কুণাল সরকার রোগী ও তাঁর পরিবারের সচেতনতার ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। তাঁর পরামর্শ, বাড়িতে পালস অক্সিমিটার রাখুন এবং তা দিয়ে নিয়মিত অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ করুন। ডা. সরকারের কথায়, “শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯২-এর নিচে নামলেই বিপদের সূচক ধরতে হবে।”
উপসর্গহীনদের ক্ষেত্রে অনেক সময় আমরা বুঝতেই পারি না যে, একটু একটু করে করোনা শত্রু কখন আমাদের ফুসফুসে থাবা বসিয়েছে। তারপর হঠাৎই শুরু হয় শ্বাসকষ্ট এবং তখন অনেক ক্ষেত্রেই আর কিছুই করার থাকে না। সেই কারণেই ডা. সরকারের পরামর্শ, কোনও শারীরিক অসুস্থতা না থাকলেও প্রতিদিন অন্তত একবার করে পালস অক্সিমিটার দিয়ে নিজের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা নজরে রাখুন।
একই কথা বলছেন কলকাতার আর এন টেগর হসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, বিশিষ্ট কোভিড চিকিৎসক ডা. অরিন্দম বিশ্বাস। তাঁর পরামর্শ, “রোগীর পেটের ওঠানামা লক্ষ্য রাখুন। প্রতি মিনিটে পেটের ওঠানামা যদি ২৫ থেকে ২৭ এর বেশি হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই বুঝতে হবে সেই রোগীর শরীরে অক্সিজেনের বিপুল ঘাটতি তৈরি হয়েছে এবং জরুরি ভিত্তিতে তাঁর অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া প্রয়োজন।”
সাধারণ ভাবে একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ পালস অক্সিমিটারে ৯৭ বা তার বেশি থাকার কথা। অক্সিজেনের পরিমাণ ৯৪-৯৫ থাকলে বারবার তা মাপতে হবে এবং নজরে রাখতে হবে। কোনও ভাবে অক্সিজেনের মাত্রা ৯২ এর নিচে নামলেই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এবং অক্সিজেন সাপোর্ট দিতেই হবে।