সুশ্বেতা ভট্টাচার্য
বিএনপি-জামাতের ষড়যন্ত্রে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করার জন্যই পুজো মণ্ডপে হামলা চালিয়েছে। মণ্ডপে কোরান শরিফ রেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানোর মূল টার্গেট শেখ হাসিনা সরকারকে বিপাকে ফেলা। কলকাতায় এসে দেশে হিন্দুদের উপর হামলার জন্য ঘুরিয়ে খালেদা জিয়ার দল ও জামাত-হেফাজতেকেই টার্গেট করলেন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তাঁর কথায়, “যারা চায় না ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকুক, সেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিই সম্প্রীতি নষ্ট করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি খারাপ করছে। মনে রাখতে হবে, রাজাকার—আলবদরের বংশধররা এখনও গোপনে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। যাঁরা ভোটের সময় আওয়ামি লিগকে ভারতের দালাল বলে, শেখ হাসিনার কপালে সিঁদূর এঁকে পোস্টার ছাড়ে তারা এই মণ্ডপে হামলার জন্য দায়ী।” তিনদিনের পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসা ড. মাহমুদ স্বীকার করেছেন, পুজোয় মন্ডপে হামলার ঘটনা “রাষ্ট্রের মূল চেতনা ধর্মনিরপেক্ষতা ভাবমূর্তিকে ক্ষু্ন্ন করেছে।”
কলকাতা প্রেসক্লাবে এক কর্মসূচিতে ‘বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর হামলা’ নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তথ্যমন্ত্রী ড. মাহমুদ বলেন, “আমরা সবাই বাংলাদেশি, আমরা সবাই বাঙালি। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বলে আলাদা কোনও সংখ্যালঘু বাংলাদেশে নেই। আমরা সবাই মৌলবাদের বিরুদ্ধে একসাথে লড়াই করছি। মণ্ডপে কোনও হিন্দু গিয়ে কোরান রাখেনি, রাখবেও না।”
জামাত, রাজাকারদের উত্তরসুরী ও বিএনপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেছেন, “নবমীর দিন হামলার খবর শুনে নেত্রী হাসিনা-সহ আওয়ামি লিগের নেতারা সবাই নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। দেশজুড়ে সমস্ত পুজো মণ্ডপকে পাহারা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এখন যত বাড়ি ও মন্দিরে ভাঙচুর হয়েছিল তা পুনর্নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার।”
নিজের সরকারের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি তুলে ধরার পাশাপাশি সহকর্মী মন্ত্রী মুরাদ হাছানের ‘১৯৭২ সালের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান’ ফিরিয়ে আনার বিতর্কিত প্রশ্ন পাশ কাটিয়েছেন তথ্য ও সম্পচারমন্ত্রী। উল্টে তিনি দাবি করেন, “বাংলাদেশ ৩২ হাজার দুর্গাপুজো হয়েছে, সরকার সব পুজো কমিটিকেই আর্থিক অনুদান দিয়েছে। মাত্র তিনদিনে কয়েকটা মণ্ডপে চক্রান্তকারীরা হামলা চালিয়েছে, কিন্তু পুলিশ কড়া হাতে দমন করেছে, ১২০০ অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়েছে।”
জীববিজ্ঞানী ড. মাহমুদ বিধানসভায় স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও দীর্ঘ বৈঠক করেন। সংসদীয় রাজনীতির নানা বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষের অনুষ্ঠানে বরিশালের ভূমিপুত্র বিমানকে আমন্ত্রণ জানান তিনি। পরে সন্ধ্যায় মুজিব বর্ষের কর্মসূচির অংশ হিসাবে কলকাতা প্রেসক্লাবে ‘বঙ্গবন্ধু সংবাদ কেন্দ্র’ উদ্বোধন করেন। সম্মানিত করেন কলকাতার নানা সংবাদমাধ্যমে থাকা মুক্তিযুদ্ধের সময়ের পাঁচ প্রবীণ সাংবাদিককে। মন্ত্রীর সঙ্গে সমস্ত কর্মসূচিতে হাজির ছিলেন কক্সবাজারের সাংসদ শামীম সারোয়ার কামাল ও কলকাতায় বাংলাদেশের উপরাষ্ট্রদূত তৌফিক হোসেন ও প্রথম প্রেস সচিব রঞ্জন সেন। কলকাতা প্রেস ক্লাবের সঙ্গে এক সমঝোতা চুক্তিতেও উপদূতাবাসের পক্ষে স্বাক্ষর করেন প্রেস সচিব।