সোমনাথ লাহা
একসময় সে ছিল নীলকুঠির একছত্র রাজকুমার। এবার আরও একবার সে পৌঁছে গিয়েছে নীলকুঠির দরজায়। তবে এবার সে রাজা। কারণ রাজকন্যার বাবা হয়ে গিয়েছে সে। তবে এবার তার সঙ্গে ভ্রমর নেই। রয়েছে বহ্নি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে এসভিএফের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই -তে ফিরছে ‘মন্টু পাইলট’ -এর দ্বিতীয় সিজন। একইসঙ্গে শ্মশানের রাস্তা খুঁজতে গিয়ে মন্টু রূপে নীলকুঠির চেনা আঙিনায় ফিরছেন অভিনেতা সৌরভ দাস। পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্যর নির্দেশনায় তৈরি এই সিরিজের জটিলতা, টানাপোড়েন আগের বারের চাইতে অনেকখানি বেশি। আরও ভালো করে বললে লার্জার দ্যান লাইফ। দ্বিতীয় সিজনের অন্যতম চমক হলেন বহ্নি চরিত্রে রফিয়াত রশিদ মিথিলা। সম্পর্কে যিনি পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী। এপার বাংলা অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতায় এটিই তাঁর প্রথম ওয়েব সিরিজ। ‘মন্টু পাইলট’-এর দ্বিতীয় সিজনের টিজার সামনে আসার পর থেকেই চর্চার বিষয় হয়েছে সৌরভের লুকস। যেটি দর্শকদের কৌতুহলের মাত্রা অনেকখানি বাড়াতে সাহায্য করেছে। মাথায় টাক, সেলাইয়ের মোটা দাগ, সেই সঙ্গে চোখের চাহনিতেই যেন জ্বলন্ত প্রতিশোধের গল্প রয়েছে। নীলকুঠির রাজকুমার মন্টু পাইলট এবার হয়ে উঠতে চলেছে সেখানকার রাজা। প্রসঙ্গত, সিজন ওয়ান -এ ভ্রমরের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর জীবন বদলেছিল মন্টুর। সেই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সোলাঙ্কি রায় । তবে সিজন টু-তে অভিনয় করছেন না সোলাঙ্কি। সেক্ষেত্রে ভ্রমর চরিত্রটির কী হয়েছে, তার উত্তরও জানা যাবে সিরিজটির দ্বিতীয় সিজনে। ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে ‘মন্টু পাইলট’-এর দ্বিতীয় সিজনের ট্রেলার।প্রকাশ পাওয়া মাত্রই ইউটিউবে ট্রেন্ডিং হয়েছে। ২মিনিট ৪৬সেকেন্ডের এই ট্রেলারে রয়েছে আরও বেশি চমক। চেনা ছন্দে সৌরভকে দেখার পাশাপাশি কখনও একজন প্রেমিক, আবার কখনও যৌনপল্লীর দালাল রূপে রীতিমতো ক্ষুরধার সৌরভ। নীলকুঠি আদতে নিষিদ্ধ পল্লী। জায়গাটা খুব সহজ নয়। আগের বার মন্টুরূপী সৌরভের হাত ধরেই নীলকুঠিতে পা রেখেছিল ভ্রমর(সোলাঙ্কি)। এবার মন্টুর হাত ধরেই নীলকুঠির অন্ধকার জগতে পা রাখবে বহ্নি। বহ্নির সঙ্গে একটা অন্যরকমের সম্পর্ক রয়েছে মন্টুর। ট্রেলারে সেই আভাস মিলেছে। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে স্ট্রিমিং শুরু হয়েছিল দেবালয় ভট্টাচার্য পরিচালিত হইচই-এর এই ওয়েব সিরিজটির। তারপরেই ‘মন্টু পাইলট’ পাকাপাকিভাবে দর্শকমনে জায়গা করে নেয়। একইসঙ্গে মন্টু হিসেবে রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন সৌরভ। প্রথম সিজনের চূড়ান্ত সাফল্যের আড়াই বছর পর আসছে ‘মন্টু পাইল্ট’-এর দ্বিতীয় সিজন। সিজন ওয়ানের কাহিনিতে দেখা গিয়েছিল মন্টু এমন একজন ছেলে যে ছেলেবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখত একজন বিমানচালক অর্থাৎ ‘পাইলট’ হওয়ার। তার মা তাকে নীলকুঠির পতিতাপল্লি থেকে বের করে আনার জন্য সব রকম চেষ্টা করেও, ব্যর্থ হয়৷ এর পরিণতি হয় মারাত্মক। নারী পাচারের চক্রে পড়ে যাওয়া মেয়েদের, রেড লাইট এরিয়ার অন্ধকার রাস্তা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার কাজ করত সে। ক্রমেই সে হয়ে ওঠে নীলকুঠির পাইলট কাম একাধারে রাজকুমার। কিন্তু এহেন প্রেমহীন মন্টুর জীবন বদলে যায় ভ্রমরের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর। দ্বিতীয় সিজনের গল্প এগিয়েছে মন্টুর দীর্ঘ সময় পর নীলকুঠিতে পুনরায় ফিরে আসার পর থেকে। এই নীলকুঠিতে রয়েছে বিবিজান। সেই চরিত্রে অভিনয় করেছেন চান্দ্রেয়ী ঘোষ। আর রয়েছে মন্টুকে পাগলের মত ভালবাসে এমন একজন, যার নাম সরমা। সেই চরিত্রে দেখা যাবে অলিভিয়া সরকারকে। নিষিদ্ধ পল্লীর সর্বেসর্বা ডাক্তারের ভূমিকায় রয়েছেন সুব্রত দত্ত। সোমবার দুপুরে হইচই -এর অফিসে ‘মন্টু পাইলট’-এর দ্বিতীয় সিজনের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক সহ অভিনেতা-অভিনেত্রী ও সিরিজের সংগীত পরিচালকদ্বয় অমিত-ঈশান। এবারে সিরিজের দ্বিতীয় সিজনে রয়েছে মোট দশটি পর্ব। রয়েছে মোট ছয়টি গান। ইতিমধ্যেই বেশ প্রশংসিত হয়েছে ‘কতোটা তোমার ছিল গানটি’। এবারে দ্বিতীয় সিজনে মন্টু রূপে প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে সৌরভ জানান, “এবারে মন্টু চরিত্রটা অনেকগুলো পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার বিষয় থাকার কারণে আমি গলাটা চেঞ্জ করে দুভাবে ডাবিং করেছি। গলা ভেঙেও ডাবিং করেছি। এবার মন্টু বাস্তব ও রক্তমাংসের চরিত্রের পাশাপাশি তার মধ্যে কিছুটা পরাবাস্তবতার ছাপও দেখতে পাবেন দর্শকরা। তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দেবালয়দার। প্রথম সিজনে দর্শকদের কাছ থেকে ভালোবাসা এতখানি পাওয়ার পর দ্বিতীয় সিজন আসছে। আমার নাম মন্টুই হয়ে গিয়েছে। চরিত্রের নামে আমায় চেনে সকলে। প্রথম সিজনে থেকে চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলাম বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। এটা আন্ডারডগের গল্প। ইতিহাস এইধরনের চরিত্ররাই সৃষ্টি করে।” মিথিলা প্রসঙ্গে সৌরভ জানান, “মিথিলা খুব ডাউন টু আর্থ একজন মানুষ। খুব ভালো একজন অভিনেত্রী, যিনি বাংলাদেশে এতখানি জনপ্রিয়, তারপরও কোনও বাড়তি ব্যাগেজ নিয়ে চলেন না।” মিথিলার কথায়, “এটা আমার কলকাতায় প্রথম কাজ। তাই আমি খুবই আনন্দিত, আবার পাশাপাশি একটুখানি নার্ভাসও। ‘মন্টু পাইলট’-এর একটা বিরাট বড় প্রমান ফলোয়ার রয়েছে। এরকম একটা বিষয়বস্তুর সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে বেশ ভালো লাগছে। বহ্নি চরিত্রটা যেরকম পবিত্রতা নিয়ে নীলকুঠিতে এসেছে, সেভাবে ধ্বংসও করে। সেটা কীভাবে করে জানতে হলে সিরিজটা দেখতে হবে।” পাশাপাশি মিথিলা জানান এই সিরিজে কাজের সুবাদে সকলের সঙ্গে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে তাঁর। সৌরভের সঙ্গে কাজ প্রসঙ্গে মিথিলা বলেন, “ও চরিত্রের মধ্যে এতটাই ঢুকে গিয়েছিল যে আমার সঙ্গে টানা-হ্যাঁচড়ার দৃশ্যগুলোয় আমার হাতে কালসিটে দাগ পড়ে গিয়েছিল।” মিথিলা আরও বলেন তাঁর আশা দর্শকরা বহ্নি হিসেবে তাঁকে মেনে নেবেন। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে বেশ ভালো ফিডব্যাক পেয়েছেন তিনি। চান্দ্রেয়ীর মতে, “এটা একটা আবেগমাখা জার্নি। সেটা থামেনি। আমি এখন আরও বেশি বিবিজান হয়ে উঠেছি। এই কাজটায় আমরা সকলেই ভীষণভাবে জড়িয়ে রয়েছি। আমরা অভিনেতা-অভিনেত্রীরা একটা চরিত্রের মধ্যেকার আবেগকে খুঁজি। সেটা যত বেশি করে পাওয়া যায় অভিনয়ের খিদে ততটাই মেটে। বিবিজান চরিত্রটা আমায় এতকিছু দিয়েছে যে আমার পরিচালকের কাছে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই।” অলিভিয়া বলেন, ” সাত বছর টেলিভিশনে কাজ করার পর ওয়েবে সরমার মতো চরিত্র পাওয়াটা ভারতের বিষয়। আমি অনেক কাজ ছেড়ে দিয়েছি এই চরিত্রটা করার জন্য। সরমার চরিত্র করতে গিয়ে আমায় প্রস্তুত হতে হয়েছে। আমায় চুল কাটতে হয়েছে। তিনমাস আইব্রোজ করিনি। একটা অপরিচ্ছন্ন লুক ক্যারি করতে হয়েছে। এরকম একটা চরিত্রে কাজ করতে সত্যিই মনের জোর লাগে।” দেবালয় ভট্টাচার্য জানান, “মন্টু পাইলট’ -এর সিজন টু করাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আমার কাছে। একজন আন্ডারডগ চরিত্রকে নিয়ে গ্রাসরুট লেভেলের একটা ওয়েব সিরিজ এর আগে এই পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এটা লোকাল ক্ল্যাসিক একটা সিরিজ। প্রথমে শুরু করার সময় একটু ভয় করলেও শুরু করার পর সবটাই স্বাভাবিক ভাবে হয়েছে। এই সিরিজে আমার ঘুঁটি সৌরভ। ওকে না পেলে এই সিরিজটা আমি করতাম না। মন্টুর চরিত্রটাকে সৌরভ এবারে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে আমি সত্যিই ভাবতে পারছি না। ওঁর কাজ দেখে আমি মুগ্ধ। তবে আমি দ্বিতীয় সিজন এনেছি কারণ তা না হলে মন্টুর গল্পটা অসমাপ্ত রয়ে যেত।” তবে মিথিলার চরিত্র নিয়ে কিছু বলতে নারাজ পরিচালক। সেটা সিরিজেই দর্শকরা দেখতে পাবেন বলে জানালেন পরিচালক। ‘মন্টু পাইলট’-এর দ্বিতীয় সিজনের স্ট্রিমিং শুরু হবে ২৯এপ্রিল থেকে হইচই-তে।