সরকার যদিও লকডাউন শব্দবন্ধ ঘোষণা করে নি। তবে বিধি-নিষেধ লকডাউনের মতোই কড়া। এই পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র ব্যবসাকেই খুঁজে নিতে হচ্ছে নতুন পথ। বারাসাতের হাটখোলা বাজারে নিয়মিত মাছ বিক্রি করেন হান্নান বৈদ্য। বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার কয়রা কদম্বগাছিতে। প্রতিদিন শাসনের ভেড়ি থেকে আসা ব্যাপারীদের থেকে আর চাঁপাডালির মাছের আড়ত থেকে পাইকারি দরে মাছ কিনে হাটখোলায় বিক্রি করতেন। কিন্তু নিয়মের বেড়াজালে বাজারে তেমন ভিড় কোথায়। সঙ্গের বড় হাড়িতে জিইয়ে রাখা তেলাপিয়া, সিলভার কার্প, রুইয়ের কাটাপোনা সাবধানে সাইকেলের কেরিয়ারে বাঁধতে গিয়ে বললেন, “চেনা খদ্দের কয়েকজন ফোন করে বলছেন বাড়ি গিয়ে মাছ দিতে। ক’দিন দিতে গিয়ে দেখলাম পাড়ায়, ফ্ল্যাট বাড়ির মহল্লায় হাঁক দিলে জ্যান্ত মাছ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে সকাল ন’টার মধ্যে। তাই এখন বাজারে নিয়ে বসে থেকে খদ্দেরের অভাব বা পুলিশের চোখ রাঙানির ভয় নেই।” মধ্য পঞ্চাশের হান্নান আগের লকডাউনের অভিজ্ঞতায় তাই আর বাজারের ভিট আঁকড়ে বসে থাকেন নি। আর লাভ বাজারের চাইতে খানিকটা বেশি হচ্ছে তা স্বীকার না করলেও, চকচকে বঁটির ধার পরখ করে বললেন, “বাবুরা যদি বাড়ির দরজায় জ্যান্ত মাছ পান তখন বাজারের ভিড় ঠেলতে হচ্ছে না দেখে দু’-চার টাকা বেশি দিতে আপত্তি করছেন না।”
তবে হান্নানের মতো না হলেও খানিকটা বেকায়দায় মধ্য চল্লিশের দীপক বসু। মধ্যমগ্রামের নামি ব্যাঙ্কোয়েট হলের ডেকোরেটার। করোনা কালে বিয়ে অন্নপ্রাশন ইত্যাদি সামাজিক অনুষ্ঠান একের পর এক বাতিল হচ্ছিল। এখন যদিও সরকার ৫০ জনের পূর্ব অনুমতি দান করেছেন কিন্তু সেই জমকালো ফুলের সাজ আর আলোর মালায় সাজানোর প্রয়োজন অনুভব করছেন না অনেক উদ্যোক্তাই। “বৈশাখ মাসে ছ’ খানা বিয়ে, অন্নপ্রাশন বাতিল হয়েছে নয়তো নামমাত্র আয়োজনে সেরেছেন পার্টি। কিন্তু আমাদের চলবে কি করে। ফুলের বাজারটা খানিকটা জানা ছিল, মল্লিকঘাট, জগন্নাথ ঘাট থেকেও ফুল আনতাম। তাই নিত্য পুজোর ফুল, বেলপাতা, তুলসী পাতা ইত্যাদি নিয়ে টোটোয় করে ঘুরছি। সংসারটা তো টানতে হবে,” টোটোয় গাঁদার মালার বান্ডিল গোছাতে গিয়ে বললেন দীপক।
লকডাউনে এভাবেই নিজের ব্যবসার ঠাঁই-নাড়া হয়ে সংসার সমুদ্রে ভেসে থাকার চেষ্টা করছেন বহু মানুষ। আর প্রথম পর্বের লকডাউন যেমন পেশা বদল করতে বাধ্য করেছিল বহু মানুষকে এবারের কার্যত লকডাউন ক্ষুদ্র ব্যবসাকে ভ্রাম্যমান হওয়ার পাঠ দিচ্ছে।