বিবাহিত দুই মেয়ের একজন দিল্লির ফ্ল্যাটে টানা ১৪দিন ঘরবন্দি। কোভিডের হাতছানির মধ্যেই স্বামী-কন্যা নিয়ে আতঙ্কের প্রহর গুনছেন। অন্যজন বাঘযতীনের ফ্ল্যাটে করোনার ছোবল শরীরে নিয়ে লড়াই করছেন। উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের বাড়িতে একাকী বাসিন্দা বৃদ্ধার প্রবল শ্বাসকষ্টে তাই ভরসা ওঁড়াই। পালস অক্সিমিটার পকেটে নিয়ে অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করাই শুধু নয়, অশোকনগর থেকে বারাসাত খুঁজে ওষুধের জোগাড়, এমনকী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এসে কল্যাণীর হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া, নিরলস ভাবে সবটাই করে চলেছেন অভিজিৎ দে, নীলাভ মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণেন্দু রায়রা। প্রথম দু’জন রেড ভলান্টিয়ার্সের কর্মী। তৃতীয় জন স্থানীয় সমাজসেবী সংগঠন সুচেতনার সদস্য।
ভোটের উত্তাপ মাপতে যখন সবাই ব্যস্ত, অভিজিৎ, নীলাভর মতো বাম ছাত্র-যুবরা তখন করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকার বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন। রাত জেগে ঘুরে ঘুরে খবর নিচ্ছেন মাসিমা-পিসিমা, কাকু-জ্যেঠুদের। অভিজিৎ, নীলাভরা শুরু করেছিলেন ২০ জন মিলে। পরিষেবা দিতে দিতে আজ ১২জন কোভিড পজিটিভ। মাত্র ৮ জন রাত দিন এক করে দেখভাল করছেন আশকনগরের ৫০০ রোগীর।
শুধু অশোকনগর নয়, রেড ভলান্টিয়ার্স কাজ করছে রাজ্য জুড়ে। বারাসাত শহরে ফাঁকা অক্সিজেন সিলিন্ডারের আকাল। রিফিল করিয়ে দেবেন তাঁরা, সামাজিক মাধ্যমে মরিয়া আবেদন স্থানীয় যুব ফেডারেশন নেতার। বালি অঞ্চলে প্রার্থীর মোবাইলে অসংখ্য হোয়াটসঅ্যাপ । তাই রাত দু’টোর সময়েও তরুণী প্রার্থী অতন্দ্র হাসপাতালে বেড জুটল কি না, তাই নিয়ে। নিউটাউনে দিনভর বাইক নিয়ে ছুটে চলেছেন প্রায় জনা কুড়ি স্বেচ্ছাসেবক। কোন ফ্ল্যাটে ‘একা মাসিমা’র প্রেসক্রিপশন মিলিয়ে ওষুধ এনে দিচ্ছেন। আবার দশদ্রোণের বৃদ্ধ সাবির আলির জন্য এক সপ্তাহের রেশন দিয়ে আসছেন।
বাম তরুণ ব্রিগেডের এই কর্মযজ্ঞেরই পোশাকি নাম রেড ভলান্টিয়ার্স। সঙ্গে জুটেছেন ছাত্র সংগঠনের পড়ুয়ারাও। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে দলের প্রবীণ মাথারাও সোৎসাহে পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁদের। শুধু তরুণ প্রার্থী দিপ্সিতা, সৃজন, সবুজরা নন, বয়সে প্রবীণ অশোক ভট্টাচার্য ও মহ: সেলিমরাও রেড ভলান্টিয়ারদের এলাকা ভিত্তিক তালিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন। আবার যেখানে তরুণদের ক্ষমতা সীমিত, সেখানে নিজেরাও এগিয়ে যাচ্ছেন। কলকাতায় এই রেড ভলান্টিয়ারদের নেতা বাম যুব নেতা কলতান দাশগুপ্ত বললেন, “সব চাহিদা মেটানো অসম্ভব। মূলত বাড়িতে করোনা আক্রান্ত মানুষ যে ন্যূনতম পরিষেবা প্রয়োজন সেটাই আমরা প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে কাজ করছি। ভলান্টিয়ারদের পিপিই কিটও দেওয়া হচ্ছিল।” কিন্তু এখন স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা ও মানুষের চাহিদা বেড়ে যাওয়াতে আর সেভাবে চুড়ান্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে পারছেন না রেড ভলান্টিয়াররা। তবুও থেমে নেই দিবা-রাত্র পরিষেবা। এরই মাঝে সিঙ্গুরের বাম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য আয়োজন করেছেন রক্ত দান শিবিরের, ছাত্র সংগঠনের ব্যানারে। তিনি বললেন, “বুথ ফেরত সমীক্ষা নয়, ভোটের শতাংশ নয়, আমরা যে কাজটা করছি সেটা আর কেউ করবে না। তাই আমরা ময়দানে আছি।” অতিমারীর বিরুদ্ধে এই বাম তরুণ প্রজন্মের লড়াই সোশ্যাল মিডিয়ায় আম জনতার ভালোবাসা জিতে নিয়েছে।