Sambad Samakal

মুকুলের প্রত্যাবর্তনে উচ্ছ্বাসহীন বীজপুর-নৈহাটি, অস্বস্তি লুকানোর চেষ্টা

Jun 12, 2021 @ 12:02 am
মুকুলের প্রত্যাবর্তনে উচ্ছ্বাসহীন বীজপুর-নৈহাটি, অস্বস্তি লুকানোর চেষ্টা

পিতা-পুত্র, দুজনেই বীজপুরের ভূমিপুত্র। প্রত্যাশা ছিল, সেই মুকুল ও শুভ্রাংশু রায় দলে ফিরলে উচ্ছ্বাসের বন্যা বইবে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। কিন্তু মুকুল-শুভ্রাংশু দলে ফেরার পর প্রত্যাশিত সেই উচ্ছ্বাস দেখা গেল না নৈহাটি বীজপুরের ঘাসফুল শিবিরে।
দলীয় বিধায়ক থেকে পুর প্রশাসক, অস্বস্তি লুকিয়ে সবার মুখেই একটাই কথা, নেত্রীর সিদ্ধান্ত শিরোধার্য। কান পাতলে আড়াল থেকে ফিরে আসছে গত ৪৪ মাসে পিতা পুত্রের বিজেপির হয়ে নানা ভূমিকার কথা।
নিজের রাজনৈতিক গুরু মুকুল রায়ের দলে ফেরা নিয়ে নৈহাটির তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিককে প্রশ্ন করা হলে বলেন, ‘নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি নিশ্চয়ই কিছু ভালো বুঝেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মুকুল দা অভিজ্ঞ রাজনীতিক। নেত্রী নিশ্চয়ই বুঝেছেন তাঁর অভিজ্ঞতা দলের কাজে লাগবে।’ রাজনৈতিক গুরু মুকুল রায় বিজেপিতে চলে যাওয়ায় দূরত্ব বেড়েছে কয়েক যোজন। কদিন আগে পর্যন্ত যাঁর বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত করা ছিল অন্যতম কাজ, এবার ফের তাঁর হাত ধরে চলা। এই প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন ছিল, কর্মীদের বোঝাতে কোনও সমস্যা হবে কি? পার্থ জানান, ‘নেত্রী কর্মীদের যেভাবে বোঝতে বলবেন, সেই বার্তাই কর্মীদের পৌঁছে দেব।’ ভোটের মুখে পার্থ ভৌমিকের বিরুদ্ধে তাঁকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ এনেছেন মুকুল পুত্র শুভ্রাংশু। ভোটে খাতায় কলমে বীজপুরের দুবারের বিধায়ক, বিজেপি প্রার্থী শুভ্রাংশুর বিপরীতে তৃণমূলের টিকিটে সুবোধ অধিকারী লড়াই করলেও আদতে গেম প্ল্যানার যে পার্থ ভৌমিকই ছিলেন, তা সবাই জানেন। ভোটের দিন বিজেপির হামলার ছবি এখনও এলাকায় অনেকের মোবাইলে ঘুরছে। এই অবস্থায় আবার শুভ্রাংশুর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা বেশ শক্ত হবে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। যদিও নৈহাটি বিধায়ক বলেন, ‘শুভ্রাংশু অনেক পরিণত। ও নিশ্চয়ই সবার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই চলবে।’
তবে সোজা সাপটা উত্তরে নৈহাটি মুখ্য পুর প্রশাসক অশোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘দিদি আজ বলেছেন ওল্ড ইজ অলওয়েজ গোল্ড। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, চকচক করলেই সবকিছু সোনা হয় না। তবে অবশ্যই নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, তাঁর নির্দেশ শিরোধার্য।’

মুকুল শুভ্রাংশু দলে থাকাকালীন বিশেষ বনিবনা ছিল না কাঁচরাপাড়ার তৎকালীন পুরপ্রধান সুদামা রায়ের সঙ্গে। সেই বাবা ছেলে ফের দলে ফেরায় স্বাভাবিক ভাবেই যে তাঁর অস্বস্তি বেড়েছে, ঘনিষ্ঠমহলে একথা স্বীকার করেছেন সুদামা। তবে প্রকাশ্যে অবশ্য ‘নেত্রীর সিদ্ধান্ত, তিনি যা ভালো বুঝেছেন করেছেন বলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন কাঁচরাপাড়ার বর্তমান মুখ্য পুর প্রশাসক সুদামা রায়।
নেত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন একদা মুকুল ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত হালিশহর পুরসভার প্রশাসক মন্ডলীর সদস্য প্রণব লোহ। যদিও সূত্রের খবর, পার্থ ভৌমিক, সুবোধ অধিকারী সহ দলের স্থানীয় নেতৃত্ব কোন পথে হাঁটেন, তা স্পষ্ট না হওয়া অবধি মন খুলে উচ্ছ্বাস দেখাতে সাহস পাচ্ছেন না প্রণব লোহ সহ দলের অন্যান্য কর্মী সমর্থকরা। বলছেন, নিশ্চয়ই বুঝেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেত্রী। তাঁর সিদ্ধান্তই শেষ কথা। আসলে নেত্রীর নাম নিয়ে নিজেদের অস্বস্তি ঢাকার চেষ্টা করছেন, মনের ভিতরের ক্ষোভ লুকিয়ে রাখার প্রানপন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বীজপুর-নৈহাটির তৃণমূল কংগ্রেসের একটা বড় অংশ।

Related Articles