হাওড়া জেলার মধ্যে যে সমস্ত বনেদি বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়, তাদের মধ্যে অন্যতম প্রাচীন হল মাকড়দহের চৌধুরী পাড়ার পুজো। জমিদার জনার্দন চৌধুরী-র বাড়ির পুজো প্রায় ৫০০ বছর ধরে যাবতীয় নিষ্ঠার সাথে হয়ে আসছে। আন্দুল রাজবাড়ির জমিদার জনার্দন চৌধুরীর নির্দেশে তার পরিবারের কয়েক জন সদস্য আজ থেকে ৫০০ বছর আগে এখানে এসে বসবাস শুরু করেন। তাদের হাত ধরেই সূচনা হয় দুর্গাপূজার।
এই পুজোর মৃৎ শিল্পীরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এখানকার দেবী প্রতিমা তৈরী করে আসছেন। সাবেকি প্রতিমার চিন্ময়ী রূপ বছরের পর ধরে ফুটিয়ে চলেছেন তারা। এমনকি ঢাকিরাও বংশপরম্পরায় এই পুজোর সাথে যুক্ত রয়েছেন এখনও। এই পুজোর বৈশিষ্ট হল এখানে শাক্ত মতে পুজোর আয়োজন করা হয়। প্রতি বছর মহালয়ার পরে প্রতিপদ থেকে মা চন্ডীর আরাধনা করা হয়। ঠাকুর দালানের পাশে চন্ডীর ঘরে নিয়মিত চন্ডীপাঠ করা হয় পুজোর দিনগুলোতে।
মায়ের চক্ষুদান করা হয় ষষ্ঠীর দিন, এমনকি প্রতিমার মূর্তিতে রঙও করা হয় ওই দিনই। প্রতিদিন সকালে ভাত ও খিচুড়ি ভোগ দেওয়া হয় মা দুর্গাকে। রাতে দেওয়া হয় লুচি ভোগ। সপ্তমী,অষ্টমী ও নবমীর দিন ছাগবলি দেওয়ার রীতি রয়েছে এই বনেদি বাড়ির পুজোয়। নবমীর দিন গোটা এলাকার মানুষকে বাড়িতে বসিয়ে অন্নভোগ খাওয়ানো হয়। জেলা ও বাইরে থেকেও বহু দর্শনার্থী এই চৌধুরী বাড়ির পুজো দেখতে ভিড় করেন প্রতি বছর।
দশমীর দিন পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে মা কে কাঁধে করে নিয়ে মাকড়চন্ডী পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয়। রীতি অনুযায়ী গোটা এলাকার মধ্যে প্রথম চৌধুরী বাড়ির প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় ওই পুকুরে। তারপর এলাকার অন্যান্য প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন মাকড়দহের চৌধুরী বাড়ির পুজো আজও ঝাঁকজমকপূর্ন ভাবেই পালিত হয়ে আসছে।