বিপক্ষের রক্ষণের তিনি ত্রাস ছিলেন। অনায়াসে ড্রিবল করে বিপক্ষ রক্ষণ তছনছ করে জালে বল জড়াতে তার জুড়ি মেলা ছিল ভার। কলকাতা ময়দানের অন্যতম সফল কোচ পিকে ব্যানার্জীর আদরের শিষ্য ‘ভোম্বল’ এবার নিজেই জীবনের ময়দানে হেরে গেলেন। কলকাতা ময়দানের বর্ণময় চরিত্র সুভাষ ভৌমিক চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
মাত্র ১৯ বছর বয়সে ময়দানে এসে প্রথম ক্লাব ইস্টবেঙ্গল। ময়দানের দুই বড় ক্লাবে টানা এগারো বছর দাপিয়ে খেলোয়াড় জীবনে ইতি টানেন সুভাষ। তবে মোহনবাগানে ছ’ বছর খেললেও লাল হলুদেই কেরিয়ারের সেরা সময় কাটিয়েছেন ময়দানের ‘গোল মেশিন’। করেছেন ৮৩টি গোল। ১৯৭৫-এ আইএফএ শিল্ডের বড় ম্যাচে সবুজ-মেরুণকে পাঁচ গোল দেওয়া ঐতিহাসিক ম্যাচে তিনি ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের নির্ভরযোগ্য ফরোয়ার্ড। ১৯৭০-এ এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন সুভাষ।
খেলা ছেড়ে বুট জোড়া তুলে রাখলেও ময়দান ছাড়েন নি সুভাষ। কোচিংয়েও সমান সফল ছিলেন তিনি। এখানেও লাল হলুদ শিবিরের হয়েও তিনি দারুণ সফল। দু’বার জাতীয় লীগ চ্যাম্পিয়ন করেছেন ইস্টবেঙ্গলকে। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ কলকাতার ময়দানের কোনো ক্লাব পেয়েছে তাঁর হাত ধরেই। ২০০৩-এ তিনি ইস্টবেঙ্গলকে আশিয়ান ক্লাব কাপ চ্যাম্পিয়ন করেন।
ময়দানের বর্ণময় চরিত্রকে ঘিরে বিতর্কও কম ছিল না। ডাকাবুকো এই ক্রীড়া নক্ষত্রের বিরুদ্ধে শুল্ক দপ্তরে চাকরি করার সময় ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তিনি গ্রেপ্তারও হন। কিন্তু ফুটবল মাঠের স্ট্র্যাটেজির চুলচেরা বিশ্লেষণে তাঁর পান্ডিত্যের কোনো বিকল্প নেই কলকাতা ময়দানে। সর্বত্র বিদেশি কোচদের রমরমার মাঝেও দেশীও কোচ হিসেবে সুভাষ এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হিসেবেই রয়ে যাবেন চিরকাল।