সুশ্বেতা ভট্টাচার্য
নৈহাটি স্টেশন থেকে ধৃত যুবকের ব্যাগ থেকে উদ্ধার হওয়া প্রায় সাড়ে ৬১ লক্ষ টাকার মালিক কে? এই প্রশ্নের তদন্ত থমকে গিয়েছে একটি ছেড়া ১০ টাকার নোটে। যার অর্ধেকটি উদ্ধার হয়েছে ধৃত যুবকের কাছ থেকে। বাকি অর্ধেক কার কাছে, সেই তথ্য পেতেই আপাতত মরিয়া তদন্তকারীরা। কারণ, ধৃত যুবকের দাবি, মোবাইলে হওয়া কথোপকথনের ভিত্তিতে ওই অর্ধেক ১০ টাকার নোটই ছিল বিপুল পরিমাণ এই টাকা ডেলিভারির সিগনাল। জেরায় তদন্তকারীদের কাছে নিজেকে নেহাতই “ক্যারিয়ার” বলে দাবি করে সে জানিয়েছে, তাকে বলা হয়েছিল তার কাছে থাকা ছেড়া ১০ টাকার নোটের বাকি অর্ধেক অংশ মিলিয়েই নৈহাটি স্টেশন থেকে টাকার ব্যাগ নিয়ে যাবে অন্য কেউ। কিন্তু তার আগেই মঙ্গলবার দুপুরে নৈহাটি জিআরপির হাতে ধরা পড়ে যায় সে।
নৈহাটি জিআরপির আইসি বাসুদেব মল্লিক মঙ্গলবার রাতেই জানিয়েছিলেন, ধৃত যুবক জেরায় জানায়, টিটাগড় এলাকার এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর টাকা নৈহাটির অন্য কোনোও স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছে দিতে এসেছিল সে। কিন্তু কার টাকা বা কাকে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল, সেবিষয়ে স্পষ্ট কোনোও জবাব দিতে পারেনি ওই যুবক। এরপরই বুধবার সকালে সামনে আসে ওই ছেড়া টাকার রহস্য। এদিন বিকেলে আইসি বাসুদেব মল্লিক জন্য, টাকা গোনার মেশিনের সাহায্যে নিশ্চিত করা হয় উদ্ধার হওয়া টাকার পরিমাণ। উদ্ধার হয়েছে মোট ৬১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৪০০ টাকা। বিপুল পরিমাণ এই টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে আয়কর দফতরের আধিকারিকদের হাতে। শিয়ালদা জিআরপি হেড কোয়ার্টারের ডিএসপি অনসূয়া দত্ত বণিক জানিয়েছেন, এই ঘটনায় আয়কর দফতরের তরফে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। পাশাপাশি আলাদা ভাবে ঘটনার তদন্ত করবে জিআরপিও।টাকার মালিক কে, সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি বলে তিনি জানান। পাশাপশি ধৃত যুবকের বয়ান ও পরিচয় নিয়েও ধোঁয়াশার কথা জানান তিনি। ডিএসপি জানিয়েছেন, বারবার বয়ান বদল করছে ধৃত যুবক। মঙ্গলবার বিপুল পরিমাণ টাকা সহ ধরা পড়ার পর প্রথমে সে নিজেকে অভিষেক সোনকর বলে দাবি করে। কিন্তু পরে তার ব্যাগ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি আধার কার্ডের জেরক্স থেকে রোহন কুমার তাতুয়া নামটি উঠে আসে। ওই আধার কার্ড অনুযায়ী তার বাড়ি টিটাগড় কাচকল এলাকায়। যদিও এই পরিচয়ও সঠিক কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত নন জিআরপি কর্তারা।
মঙ্গলবার রাতেই নৈহাটি জিআরপিতে পৌঁছে গিয়েছিলেন আয়কর দপ্তর ও রাজ্য পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখার আধিকারিকরা। রাতভর ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর বুধবার সকালে নৈহাটি জিআরপিতে আসে টাকা গোনার মেশিন। শুরু হয় টাকা গোনা। এরপর বিকেলে উদ্ধার হওয়া মোট টাকার পরিমাণ জানান আইসি বাসুদেব মল্লিক।
প্রসঙ্গত, নৈহাটি জিআরপির তৎপরতায় মঙ্গলবার দুপুরে উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ টাকা। ব্যাগের মধ্যে থরে থরে সাজানো ওই টাকার উৎসের হদিস পেতে শুরু হয় তৎপরতা। আইসি জানান, এদিন দুপুরে আপ কল্যাণী লোকাল থেকে নৈহাটি স্টেশনের ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে নামে ওই যুবক। গতিবিধি দেখে সন্দেহ হয় নৈহাটি জিআরপির আধিকারিকদের। তাকে আটক করে ব্যাগে তল্লাশি করতেই চোখ কপালে ওঠে। মেলে থরে থরে সাজানো ২০০ ও ৫০০ টাকার নোট। এরপরেই আয়কর দফতরের ও রাজ্য পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করে নৈহাটি জিআরপি।