মাঝে কেটে গেছে বেশ কয়েক মাস। দেখা হয়নি দুজনের। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ইডির হাতে গ্রেফতার হয়ে দুজনেই জেলবন্দি। তবে দুজন রয়েছেন দুই জেলে। একজন প্রেসিডেন্সিতে, অন্যজনের বিনিদ্র প্রহর কেটেছে আলিপুর মহিলা জেলে। মঙ্গলবার তাই ভিডিও কনফারেন্সে দেখা হতেই নিজেদের আর সামলে রাখতে পারলেন না পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। চোখে চোখে তাঁদের প্রেমালাপ নজর এড়াল না কারও। কখনও পার্থর জন্য অর্পিতার উদ্বেগ, আবার কখনও এলোচুলে বিশেষ ইঙ্গিত যেমন এদিন সবার নজরে পড়েছে, তেমনই চোখ এড়ায়নি পার্থর জিভ ভেঙানো, প্রেমিক হৃদয়ের আকুতিও। সব মিলিয়ে মঙ্গলবার পার্থ-অর্পিতার প্রেমের স্বাক্ষী হয়ে রইল আদালত।
এদিন ভারচুয়াল শুনানিতে দেখা হয় দুজনের। ঘড়িতে তখন দুপুর ২ টো বেজে ৫০ মিনিট। আদালতে স্ক্রিনে দেখা গেল রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে। আর দেখা হতেই মুচকি হেসে পরস্পরের নজর টানলেন তাঁরা। ইশারায় হল কুশল বিনিময়ও। মিনিট চারেক পর পার্থ ইশারায় খোঁজ নেন অর্পিতা খেয়েছেন কিনা। পালটা একই প্রশ্ন করেন অর্পিতাও। তবে ইশারায় ভাব বিনিময় হলেও কেউ কারও কথা শুনতে পাচ্ছিলেন না। ইশারায় সেটিও দুজনে দুজনকে বুঝিয়ে দেন। ক্রমে জমে ওঠে প্রেমের খুনসুটি। আচমকাই অর্পিতাকে জিভ ভেঙাতে দেখা যায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে। কিশোরীর চপলতায় হেসে ফেলেন অর্পিতা। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবার আরও বেপরোয়া। অর্পিতাকে লক্ষ্য করে হার্ট সাইন দেখান ৭০ এর যুবক। আবার অর্পিতার লাজুক হাসি। ঘড়ির কাঁটায় তখন ৩ টে বেজে ৮ মিনিট। হাত দিয়ে অর্পিতাকে নিজের নীল রঙের ফতুয়া দেখান পার্থ। মাথা নেড়ে সম্মতি দেখাতে দেখা যায় অর্পিতাকেও। যদিও কী বোঝাতে চেয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। ঘড়িতে ৩ টে বেজে ১০। অর্পিতা ইশারায় পার্থকে জিজ্ঞেস করেন চা খাওয়া হয়েছে কিনা। তখন পার্থ বুকের বা দিকে আঙুল দিয়ে কিছু লেখার ইশারা করেন। আবার মিষ্টি প্রেমের হাসিতে জ্বলজ্বল করে ওঠে দুজনের চোখে মুখ। কিন্তু দুমিনিটের মধ্যেই মুহূর্তেই ফ্যাকাসে হয়ে যায় অর্পিতার মুখ। হঠাৎই স্ক্রিন থেকে উধাও পার্থ। পার্থর কানেকশন ফিরতেই অবশ্য ফের স্বস্তি। এরপরই যেন ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছে যায় প্রেম পর্ব। এলোচুল সামনে টেনে মোহময়ী দৃষ্টিতে যেন পার্থর হৃদয় এফোঁড় ওফোঁড় করে দেন তরুণী প্রেমিকা। চকচক করে ওঠে পার্থর চোখ, ঠোঁটে মুচকি। ইশারায় পালটা পার্থর গোঁফের প্রশংসা করতে দেখা যায় অর্পিতাকে। রোমান্স যখন জমে উঠেছে, ঠিক তখনই ফের কেটে যায় পার্থর কানেকশন। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে এসে পার্থ জানান, তিনি চা খাচ্ছিলেন। আর তর সইছিল না অর্পিতার। তিনি এবার সরাসরি ঠোঁট দেখিয়ে পার্থকে বিশেষ ইঙ্গিত করেন। কিন্তু ততক্ষণে বোধহয় প্রাক্তন মন্ত্রী মশাইয়ের মনে পড়ে গিয়েছে, আদালতে সবাই তাঁদের দেখছেন। তাই অর্পিতার ঠোঁটের ইশারার মনমতো জবাব আর দেওয়া হয় না। লাজুক প্রেমিক বলেন, মাথা কী খারাপ হয়ে গিয়েছে? তাল কাটে বেলা সাড়ে তিনটেয়, যখন বলতে শুরু করেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুনানি শেষে ফের পার্থকে উদ্দেশ্য করে কিছু লিখে বোঝানোর চেষ্টা করেন অর্পিতা। তবে তারপরেই লাইন ডিসকানেক্ট হয়ে যায়।
