Sambad Samakal

শোভন হাতছাড়া হতে পারে, ভয়ে পিজিতে বেড়াজাল বৈশাখীর

May 20, 2021 @ 12:43 pm
শোভন হাতছাড়া হতে পারে, ভয়ে পিজিতে বেড়াজাল বৈশাখীর

৪৮ ঘন্টার ব্যাবধানে রত্নার দুই আচমকা অভিযানে বৈশাখীর গোলপার্কের সাজানো বাগান প্রায় ছারখার হওয়ার মুখে। একদিকে কাননের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর নমনীয় মনোভাব, অন্যদিকে রত্না ও পুত্র-কন্যার প্রতি পিতৃত্বের টান, শোভনকে ফের ঘর ওয়াপসির পথে টানছে? বঙ্গ রাজনীতিতে এমনই জোর প্রচারে রাতের ঘুম উড়েছে শোভনের বান্ধবীর। তবে তিনি যে মুহূর্তে হু হু করে দমকলের মতো চোখে জলের ধারা নামাতে পারেন, তা প্রেসিডেন্সি জেলের গেট সাক্ষী। মধ্যরাতে বৈশাখীর ওই কান্নার আওয়াজে বহু মানুষের ঘুম ভেঙে গিয়েছিল বলে সরস মন্তব্য শোনা গিয়েছে। নিন্দুকেরা বলছেন, রত্না নিজাম প্যালেসে আসায় যে সহানুভূতির ঢেউ উঠেছিল, তা কাটিয়ে দিতেই নাকি অতটা চোখের জল ফেলেছিলেন। শুধু তাই নয়, শোভনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বোঝাতে একের পর এক সাংবাদিককে ফোন করে নির্লজ্জভাবে বৈশাখী বলেছেন, তাঁর বেডরুম থেকে শোভনকে গ্রেফতার করেছে সিআরপিএফ। দুজনেই নাইট ড্রেস পরে নিজাম প্যালেসে এসেছেন। কিন্তু রাত পোহাতে নতুন নাটক দেখেছে পিজি হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ড। কেবিনে ঢুকে ঘন্টার পর ঘন্টা থাকছেন, ডাক্তারদের নির্দেশ দিচ্ছেন। এখানেই শেষ নয়, বৈশাখী হাসপাতাল সুপারের কাছে দাবি করেন, শোভনের পাশের কেবিনে তাঁকে ভর্তি করিয়ে দিতে হবে। গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ পিজির ডাক্তার ও প্রশাসকরা।
কিন্ত গ্রেফতারের দিনের উপস্থিতির ক্ষত কাটতে না কাটতেই বুধবার আচমকা ছেলে মেয়েকে নিয়ে পিজিতে হাজির হন রত্না। শোভনের কেবিনে ছেলে ঋষি ও মেয়ে সুহানা দীর্ঘক্ষণ থাকলেও স্বামীর মুখোমুখি হননি রত্না। সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন পর মেয়েকে কাছে পেয়ে আবেগে ভেসে গিয়েছিলেন কানন। ছেলেমেয়েকে নিয়ে নানা গল্পে মাতেন প্রাক্তন মেয়র।
কেবিনের গোটা ঘটনা শুনেই এরপরই প্রমাদ গোনেন বৈশাখী। সত্যিই কি তা হলে পর্ণশ্রীর বাড়িতে রত্নার সংসারে ফিরে যাবেন কানন? যদি চলে যান, কী হবে তাহলে ? এভাবে মাঝপথে বসিয়ে সত্যিই কি কানন রত্নার ডাকে সাড়া দেবেন? এরপরই মোক্ষম অস্ত্র প্রয়োগ করেন মিল্লি আল আমিন কলেজের প্রাক্তন টিচার ইন চার্জ। কেবিনে গিয়ে শোভনের সামনে বসেই কান্নায় ভাসিয়ে দেন তিনি। এরপরই এসএসকেএম হাসপাতালের সুপারকে জেলবন্দি চিকিৎসাধীন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের তরফে আইনজীবীর দেওয়া চিঠির জেরে বৈশাখীকে সামনে রেখে নতুন করে রত্নার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। আইনজীবী লিখেছেন, অনুমতি ছাড়া পরিবারের লোক, স্ত্রী ও পুত্র-কন্যারা কেউ যেন শোভনের কেবিনে না যান। হাসপাতালের সূত্র বলছে, রীতিমতো কেবিনে বসে থেকে আইনজীবীকে দিয়ে পুত্র-কন্যার সঙ্গে দেখা বন্ধ করার এই কড়া চিঠি লিখিয়েছেন বৈশাখী। আসলে বান্ধবীর কাছে শোভনকে নিয়ে মূল ভয়ের জায়গা হল ঋষি ও সুহানা। রত্না নয়, দুই আত্মজর টানে, অপত্য ভালোবাসার শিকড়ের সন্ধানে যে কোনও দিন কানন ফিরে যাবেন নিজের সাধের বাড়ির তিনতলায়। বস্তুত এরপরই আইনজীবীকে দিয়ে বাবার সঙ্গে সন্তানদের দেখা করার রাস্তাও বন্ধ করে দেন বৈশাখী। কিন্তু খবর পেয়ে শোভন-জায়া রত্নাও পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেছেন,“মামলা চললেও ডির্ভোস হয়নি এখনও, আমরা এখনও স্বামী-স্ত্রী। আমরাও পরিবারের লোক, যদি আমরা যেতে না পারি, তবে বান্ধবী পরিচয়ে বৈশাখীও কেন শোভনের কেবিনে ঢুকবেন? আমিও চিঠি দিয়ে ওঁর ঢোকা বন্ধ করার দাবি জানাব । বৈশাখী ঢুকলেই পিজিতে তুমুল অশান্তি করব, রত্নাকে কোথাও থামানো যায়নি, যাবেও না।”
বিষয়টি নিয়ে বৈশাখীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে রাতে ফোনে পাওয়া যায়নি। এখন দেখার, নারদ মামলায় জামিন নিয়ে আইনি যুদ্ধের মধ্যে যখন বঙ্গ রাজনীতি উত্তাল, তখন শোভন-বৈশাখী-রত্নার সম্পর্কের টানাপোড়েনে কে শেষপর্যন্ত যেতেন? আসলে সাধারণ মানুষ রত্নার পক্ষে। বৈশাখী কী করবেন, যদি সত্যিই কানন রত্নার কাছে ফিরে যান? রত্না তো প্রথম থেকেই দরজা খুলে রেখেছেন, বলেছেন, বাড়ি শোভনের, যে কোনও দিন ফিরতেই পারেন। আর দল? মমতাদি ঠিক করবেন? তবে সবার মুখে একটাই প্রশ্ন, রত্না কি যুদ্ধ জিততে পারবেন? না,পরকীয়াই শেষপর্যন্ত ট্রফি ঘরে তুলবে? অবশ্য বাঙালি সমাজ চাইছে, স্ত্রী রত্নার জয়। শেষপর্যন্ত অগ্নিসাক্ষী করে বিয়ে করা বউ জিতবেন তো? তাকিয়ে বাংলা।

Related Articles