সুশ্বেতা ভট্টাচার্য
রবিবার কার্যত উৎসবের মেজাজেই ভোট হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর পুরসভায়। অন্যদিকে, রাজপুর-সোনারপুর পুরসভা এলাকার একটি ওয়ার্ডে অশান্তি ভয়াবহ আকার নিলেও মোটের উপর সুষ্ঠুভাবেই মিটেছে ভোট পর্ব। রবিবার সন্ধ্যায় নির্বাচন শেষে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই দুই পুরসভায় ভোটের হার বেশ ভালোই। যার নিরিখে ঘাসফুল শিবিরের দাবি, পাল্লা ভারী শাসক দলেরই, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঢালাও উন্নয়ন কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দুই হাত ভরে ভোট দিয়েছেন আমজনতা। শাসক শিবিরের দাবি, আগামী ২ মার্চ, ভোট গণনা হতেই এই দুই পুরসভা থেকে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে বিরোধীরা।
বারুইপুরে এবার পুরবোর্ড ১৭-০ করার ডাক দিয়েছিলেন বারুইপুর পশ্চিমের বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বারুইপুর পুরসভার বিদায়ী উপপুরপ্রধান গৌতম কুমার দাসও জানিয়েছিলেন, উন্নয়নে ভর করে মানুষের বিপুল জনসমর্থন নিয়ে এবার বারুইপুর পুরবোর্ড বিরোধীশূন্য হবেই। রবিবার, ভোটের দিন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে মানুষের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সেই দাবির বাস্তব রূপায়ণের পথকেই প্রসস্ত করল বলে মত রাজনৈতিক মহলের। এদিন বারুইপুরের ১৭টি ওয়ার্ড ঘুরে বিরোধীদের সেভাবে কোনও অস্তিত্বই চোখে পড়ল না। সেভাবে চোখে পড়েনি বিজেপির বুথ ক্যাম্প। তবে কিছু ওয়ার্ডে অল্প পরিসরে হলেও লড়াইয়ের ময়দানে বামেদের উপস্থিতি দেখা গিয়েছে। যদিও সামান্য কিছু ভোট কাটা ছাড়া সিপিএম তথা বামেরা কোনও প্রভাবই ফেলতে পারবে না বলে দাবি গৌতম দাসের। এদিন পদ্মপুকুরে নিজের ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রে গৌতমবাবুকে ভোটারদের আড্ডার মেজাজেই দেখা গেল। কখনও ভোটাররা তাঁর দিকে এগিয়ে এসে করলেন কুশল বিনিময়, কখনও প্রবীণ ভোটারের হাতের স্লিপ দেখে বুথ চিনিয়ে দিতে দেখা গেল গৌতমবাবুকে। তবে কোথাও ভোটারদের প্রভাবিত করার সামান্যতম চেষ্টাটুকুর অভিযাগও আনতে পারেননি বিরোধীরা। একই ভাবে উৎসবের মেজাজে ভোট হয়েছে বারুইপুরের ২, ৩, ৪ থেকে শুরু করে ১০, ১১ সহ প্রায় সব ওয়ার্ডেই। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে এবার ঘাসফুলের প্রার্থী প্রয়াত প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূলের প্রাক্তন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি অরূপ ভদ্রর স্ত্রী অর্চনা ভদ্র। ফলে এই ওয়ার্ডে এবার বাড়তি নজর রয়েছে সকলের।
অন্যদিকে, শাসক দল তৃণমূল রাজপুর-সোনারপুর পুরসভাকেও এবার বিরোধীশূন্য করার পরিকল্পনা নিলেও ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে একটি ঘাসফুল শিবিরের হাতছাড়া হতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এদিন সকালেই রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ইভিএম মেশিন ভাঙচুরের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। ঘটনায় ছয় জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। অন্যান্য ওয়ার্ডে ভালো ফল আশা করলেও এই ওয়ার্ডটি নিয়ে চিন্তায় ঘাসফুল শিবির। এবারের নির্বাচনী লড়াইয়ে এই পুরসভার ৮ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ড বিশেষ নজর কেড়েছে। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী মোফারজাল হোসেন (ভুলু) বড় ব্যবধানে জিততে চলেছেন বলে দাবি করেন। ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সুশান্ত দাস (লাল্টু) প্রায় সাড়ে তিন হাজার ভোটে জিতবেন বলে দাবি করেছেন। সূত্রের খবর, রাজপুর-সোনারপুরের নতুন পুরবোর্ডে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে চলেছেন এই দুই তৃণমূল প্রার্থী।