সব ব্যাপারে আগ বাড়িয়ে কুণাল ঘোষের মন্তব্য করা যে মোটেও ভালো চোখে দেখছেন না পার্থ-বক্সীরা, শনিবার শ্লেষ মেশানো বক্তব্যে তা বুঝিয়ে দিলেন ফিরহাদ (ববি) হাকিম। এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে দলের রাজ্য মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মন্তব্য প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এদিন কার্যত বিরক্তির সুরেই বলেন, “কুণাল মন্ত্রিসভার কেউ নয়।” ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, এই মন্তব্যে কার্যত কুণাল ঘোষের এক্তিয়ার নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন ফিরহাদ।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি ঘিরে এই মুহূর্তে তোলপাড় চলছে তৃণমূলের অন্দরে। এই ইস্যুতে কার্যত আড়াআড়ি ঘাসফুল শিবির। স্কুল সার্ভিসে (SSC) নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে যাওয়ার পর শুক্রবার সংবাদ মাধ্যমের সামনে বিস্ফোরক মন্তব্যে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কাঠগড়ায় তোলেন কুণাল ঘোষ। তিনি বলেছিলেন, “স্কুল সার্ভিসে যে কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠছে তা বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর মেয়াদে হয়নি। এ নিয়ে কিছু জানার থাকলে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করুন। তিনিই বুঝিয়ে বলতে পারবেন।” আর তারপরেই ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শনিবার এনিয়ে কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে তোপ দাগেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এদিকে তাঁর মন্তব্য নিয়ে জলঘোলা হতেই সুর নরম করেন কুণালও। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে শনিবার সকালে উত্তর কলকাতা থেকে তিনি ছুটে যান দক্ষিণ কলকাতার নাকতলায় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে। কিন্তু ‘বিরক্ত’ পার্থ এদিন দেখাই করলেন না কুণালের সঙ্গে। যদিও কুণালের দাবি, পাশের বাড়িতে একজনের মৃত্যু হওয়ায় সেখানে ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তাই দেখা হয়নি।
এদিন কুণাল ঘোষের মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়ান ফিরহাদ। তিনি বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও মন্ত্রী-নেতা অন্যায় করেননি। এখানে অন্যায় হয় না। প্রক্রিয়াগত ভুল হয়েছে কিনা সেটা তদন্ত সাপেক্ষ। মন্ত্রিসভায় পার্থদার মতো আমি মন্ত্রী। যদি কোথাও ত্রুটি হয়ে থাকে, তা হলে পার্থদার যতটা দায়, ততটা দায় আমারও রয়েছে। এটা আমাদের কালেকটিভ পরিবার। এখানে কারও উপর কেউ দায় ঠেলতে পারে না। এই ঘটনায় মন্ত্রিসভায় সবার সমষ্টিগত দায় রয়েছে।” তাঁর কথায়, “এত বড় একটা সরকার চলছে। সেখানে কোথায় কোন প্রক্রিয়াগত ত্রুটি হচ্ছে, তা কি সবার পক্ষে জানা সম্ভব। আমি কলকাতার মেয়র। এখানে কোথায় অ্যাসেসমেন্ট নিয়ে কে ঘুষ খাচ্ছে, কোথায় ট্রেড লাইসেন্সের জন্য কে টাকা নিয়ে নিচ্ছে, তা কি আমার পক্ষে জানা সম্ভব? সুতরাং পার্থদাকে দায়ী করা ঠিক হচ্ছে না। প্রক্রিয়াগত ভুল থাকলে হয় বিভাগীয় তদন্ত হবে বা যা তদন্ত হচ্ছে তা হবে।”