সোমনাথ লাহা
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা কালজয়ী চরিত্র শ্রীকান্ত ও রাজলক্ষ্মী। সাহিত্যপ্রেমী বাঙালির সম্পদ। শরৎচন্দ্রের কলমে সৃষ্ট এই চরিত্রগুলি বাঙালির মননে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছে। এবার পাঠকদের সেই প্রিয় চরিত্রদের নতুন আঙ্গিকে সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে মেলে ধরেছেন পরিচালক সানি ঘোষ রায়। এসভিএফের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘হইচই’-তে নতুন আঙ্গিকে আসতে চলেছে ওয়েব সিরিজ ‘শ্রীকান্ত’।
অ্যাক্রোপলিস এন্টারটেনমেন্ট প্রা: লিমিটেড প্রযোজিত এই সিরিজে শ্রীকান্তর ভূমিকায় রয়েছেন ঋষভ বসু। রাজলক্ষ্মী হয়েছেন সোহিনী সরকার। অভয়ার চরিত্রে দেখা যাবে মধুমিতা সরকারকে। পুরোনো ভালবাসাকে নতুন করে খুঁজে পাওয়ার কাহিনিই এই ওয়েব সিরিজটির মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছেন পরিচালক। এখানে শ্রীকান্ত একজন ফ্যাশন ডিজাইনার আর রাজলক্ষ্মী ডিভা। সেই সূত্র ধরেই শ্রীকান্ত ও রাজলক্ষ্মীর আলাপ। গল্পের পরতে পরতে রয়েছে ভালোবাসার কাহিনি। আবার সেখানেই রয়েছে অবিশ্বাসের অভিশাপ। এই অভিশাপেই বিষাক্ত হয়ে ওঠে শ্রীকান্ত ও রাজলক্ষ্মীর প্রেম। আসে অভয়ার চরিত্র। মিউজিক্যাল এই ওয়েব সিরিজে অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন শ্রীমা ভট্টাচার্য, জনপ্রিয় তামিল অভিনেত্রী গায়ত্রী শঙ্কর, অঙ্গনা রায়, জুন মালিয়া ও সুকৃত সাহা।
সংগীত পরিচালনায় দেবায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রলয় সরকার ও আনিস আহমেদ। গান গেয়েছেন দেবায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীজিতা মিত্র। সিরিজটির আউটডোর শুটিং হয়েছে পন্ডিচেরিতে। মঙ্গলবার শহর তিলোত্তমার একটি সুপরিচিত হোটেলের লনে র্যাম্প শোয়ে গ্ল্যামারের ছটার বিচ্ছূরণ ঘটালেন ঋষভ, সোহিনী, অঙ্গনা ও শ্রীমা। আধুনিক মোড়কে শরৎ চরিত্রদের র্যাম্প ওয়াকের পাশাপাশি এদিন সিরিজের লাইভ মিউজিকে এক মনকাড়া সন্ধ্যার রচনা করলেন আনিস আহমেদ, প্রলয় সরকার, দেবায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্রীজিতা মিত্ররা। তাঁদের লাইভ মিউজিকের তালে মঞ্চ মাতালেন কলাকুশলীরা। তবে শুধু তাঁরাই নন, দশজন ইনফ্লুয়েনশারের র্যাম্প শোও ছিল দেখার মতোই। ইন্ডিপেনডেন্ট আর্টিস্ট ও ডিজাইনারদের পোশাক ও জুয়েলারি পরে মঞ্চ মাতালেন তাঁরা। সঙ্গে উপরি প্রাপ্তি হিসেবে ছিল ইন্ডিপেনডেন্ট আর্টিস্ট ও ডিজাইনারদের দেওয়া স্টল। পাশাপাশি এদিন ‘শ্রীকান্ত’ ওয়েব সিরিজের তৃতীয় গান ‘রাজ্যপাঠ’-এর আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করা হল। ইতিপূর্বে সিরিজের বাকি দুটি গান ‘আমাকে নাও’ এবং ‘ও রাধে রাধে’-রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে দর্শকমহলে। ১৪ এপ্রিল থেকে হইচই প্ল্যাটফর্মে স্ট্রিমিং হবে ‘শ্রীকান্ত’ ওয়েব সিরিজটির।
প্রসঙ্গত ইতিপূর্বে সোহিনীর সঙ্গে মঞ্চে অভিনয় করেছেন ঋষভ। ‘মহাভারত ২’ নাটকে সোহিনী হয়েছিলেন দ্রৌপদী। আর ঋষভ অভিনয় করেছিলেন অভিমন্যুর ভূমিকায়। অর্থাৎ মা ও ছেলের ভূমিকায় ছিলেন দু’জন। ‘শ্রীকান্ত’ সিরিজে তাঁরা হয়েছেন প্রেমিক-প্রেমিকা। ঋষভের কথায়, “শ্রীকান্ত উপন্যাসটি আমার মনের খুব কাছের। আমি এই চরিত্রটির অ্যাভেঞ্চার, ভবঘুরে মানসিকতার বিষয়টা ছাত্রাবস্থায় পড়ে খুব প্রভাবিত হয়েছিলাম। শ্রীকান্তর প্রেমের ধরণটা পুরোনো হলেও আকর্ষণ করে। এই সিরিজটা অনেকটা নতুন মোড়কে পুরোনো উপন্যাসটাকে ধরার চেষ্টা।” তবে সোহিনীর সঙ্গে রোমান্টিক দৃশ্য প্রসঙ্গে ঋষভের জবাব, “চিত্রনাট্য শুনে ও আমার বিপরীতে রাজলক্ষ্মী সোহিনী শুনে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কারণ মঞ্চে ‘মহাভারত ২’ সোহিনী আমার মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিল। আমি অভিমন্যু করেছিলাম, ও দ্রৌপদী। তবে সোহিনীই আমায় দৃশ্যগুলো করতে সাহায্য করেছে।”
সোহিনীর অভিমত, “শরৎচন্দ্রের কাল্ট উপন্যাসকে আজকের সময়ে এনে যেভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে তাতে অনেকেই রেগে যেতেও পারেন, আবার অনেকের ভালোও লাগতে পারে। ‘মন্দার’-এর ক্ষেত্রেও এটাই মনে হয়েছিল। তবে সকলে খুব ইতিবাচক সমালোচনা করেছিলেন। আমার মনে হয় ‘শ্রীকান্ত’-র ক্ষেত্রেও সেটাই করবেন। রাজলক্ষ্মী চরিত্রে অভিনয় করার ক্ষেত্রে আমার সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল আমাকে সুন্দর লাগতে হবে। একদম ডিভার মতো। মানে কাঁদলেও মুখ বিকৃত করলে হবে না। সেটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল আমার কাছে।”
ঋষভের সঙ্গে রোমান্টিক দৃশ্য প্রসঙ্গে সোহিনীর সাফ জবাব, “আমার কাজই চরিত্র ফুটিয়ে তোলা। সেই কারণেই আমি পারিশ্রমিক পাই। এখানেও মন দিয়ে সেই কাজটাই করেছি।” ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীমার এটাই প্রথম ওয়েব সিরিজ। শ্রীমার মতে, ” আমার কাছে এটা খুব স্পেশাল। ছোটপর্দার পাশাপাশি ওয়েবে কাজ করেন বেশ আনন্দ পেয়েছি। আমি এখানে অ্যানির চরিত্রে অভিনয় করছি। চরিত্রটা আবেগে পরিপূর্ণ। শ্রীকান্তর সঙ্গে অ্যানির ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, নাকি প্রেম রয়েছে সেটা জানতে হলে সিরিজটা দেখতে হবে।”
সিরিজে ছোট তথা অল্পবয়সী রাজলক্ষ্মীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন অঙ্গনা। তাঁর কথায় “এটা ২০০৫-০৬ এর প্রেক্ষাপটে শ্রীকান্ত। যেটা আমরা পড়ে এসেছি, শুনে এসেছি সেটাকেই সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে মেলে ধরা হয়েছে। আমি এখানে ১৫-১৬ বছর বয়সী রাজলক্ষ্মীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। সে মফস্বলের মেয়ে। তবে তার মধ্যে রয়েছে প্রবল উচ্চাকাঙ্খা। এর জন্য সে যা ফেস করে এবং পরবর্তীতে পিয়ালী হয়ে ওঠে। যেটা সোহিনীদি করেছে।”