স্বপ্নরেখা সেনশর্মা
শুধুমাত্র চমক নয়, রীতিমতো অঙ্ক কষেই বিজেপি শিবিরে বড় ধাক্কা দিয়ে আসানসোলে শত্রুঘ্ন সিনহাকে প্রার্থী করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার নিজেই আসানসোল লোকসভার প্রার্থীর নাম টুইট করে জানান তৃণমূল সুপ্রিমো। কিন্তু ঠিক কেন এই আসনে শত্রুঘ্ন সিনহাকে বাছলেন মমতা? রাজনৈতিক মহলের আলোচনায় উঠে আসছে বেশ কয়েকটি কারণ।
১) আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের ৫০ শতাংশেরও বেশি অবাঙালি ভোটার। এই অবাঙালি ভোটারদের আবার একটা বড় অংশ বিহার ও ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এঁদের প্রত্যেকেরই হয় জন্মস্থান বা কোনও সময়ের কর্মস্থান বিহার বা ঝাড়খণ্ড, নয়তো কোনও না কোনও সূত্রে পরিবারে কেউ না কেউ ওই দুই রাজ্যে রয়েছেন। সেই কারণেই অবিভক্ত বিহার (বর্তমান বিহার ও ঝাড়খণ্ড)-এর জনপ্রিয়তম বলিউড অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহাকে আসানসোল কেন্দ্রে প্রার্থী করে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন মমতা। লক্ষ্য, বিহার ও ঝাড়খণ্ড শক্তি দ্বারা অবাঙালি ভোটারদের মধ্যে প্রভাব ফেলা।
২) ১৯৭৯ সালে বিপুল জনপ্রিয় হয়েছিল অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘কালা পাত্থর’ সিনেমাটি। সেই সিনেমায় অমিতাভের সহনায়ক হিসেবে বিশেষ নজর কেড়েছিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। সিনেমাটির চিত্রনাট্য নির্মিত হয়েছিল কোলিয়ারি এলাকা ঘিরে। তৃণমূল নেত্রী মনে করেন, আসানসোল খনি অঞ্চল বা কোলিয়ারি এলাকার সঙ্গে তাই কোথায় যেন সংপৃক্ত হয়ে যান ‘কালা পাত্থর’-এর সহনায়ক শত্রুঘ্ন সিনহা।
৩) শত্রুঘ্ন সিনহা পরিচিত মুখ, অভিজ্ঞ সাংসদ। কংগ্রেস দিয়ে রাজনীতি শুরু করলেও বিজেপি জমানায় বাজপেয়ী আমলে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ভারতের বিদেশ, সড়ক, পরিবহণ প্রভৃতি বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। তাঁর এই রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও পরিচয় এবং প্রশাসন সামলানোর দক্ষতা বিশেষ কাজে লাগবে বলেও মনে করেন মমতা।
৪) তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই দলের বিভিন্ন আর্থিক নীতি নির্ধারণে বিশেষ পরামর্শ দিচ্ছিলেন শত্রুঘ্ন। যা তাঁকে নেত্রীর আস্থাভাজন করে তোলেন।
৫) স্বচ্ছ ব্যক্তি ইমেজ রয়েছে শত্রুঘ্নর। এত বড় মাপের অভিনেতা ও পোড় খাওয়া রাজনীতিক হওয়া সত্ত্বেও তাঁর জীবন বিন্যাসে কোনও দাগ নেই, না আছে চারিত্রিক ত্রুটির কোনও অভিযোগ। মমতার তাঁকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ এটাও।
তবে শত্রুঘ্ন সিনহাকে মমতা প্রার্থী করতেই বহিরাগত ইস্যুতে সরব হয়েছে বিজেপি। যদিও তৃণমূলের যুক্তি, গত দু’বার আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিট জয়ী বাবুল সুপ্রিয়ও তো বহিরাগতই ছিলেন। ফলে গেরুয়া শিবিরের বহিরাগত ইস্যু এই এলাকার ভোটারদের মধ্যে কোনও প্রভাব ফেলবে না বলেই মত ঘাসফুল শিবিরের। বরং এদিন তৃণমূল নেত্রী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতেই শত্রুঘ্ন সিনহার সমর্থনে আসানসোলের রাস্তায় রাস্তায় রং তুলি হাতে দেওয়াল লিখতে নেমে পড়েছেন তৃণমূল কর্মীরা। তাই আসানসোল লোকসভা উপ নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহার জয় সময়ের অপেক্ষা বলেই দাবি ঘাসফুল শিবিরের।